
কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা নয়া পাড়া ক্যাম্পের আলোচিত আবুল ফয়েজ হত্যা মামলায় এক রোহিঙ্গাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে টেকনাফ মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এস.আই) আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, আট মাস আগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আবুল ফয়েজ নামের এক রোহিঙ্গা নিহত হয়। ওই ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী আনসার উল্লাহ সহ কয়েকজনকে আসামি করে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করেন ছেলে মো. ইসমাইল। মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয় এস.আই আজহারুল ইসলামকে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগ পত্র দেওয়ার নামে বাদীর কাছ থেকে নগদ ও বিকাশে কয়েক দফায় ৭৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরেও আসামিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে উলটো মামলার বাদীকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে এস.আই আজহারুল ইসলাম।
মো. ইসমাইলের দাবি, মামলা দায়েরের পর থেকে তদন্ত কর্মকর্তা মেডিকেল রিপোর্ট ও অন্যান্য খরচের নামে বিভিন্ন সময় নগদ ও বিকাশে ৭৫ হাজার টাকা নেন। মামলা চালানোর খরচ ও আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য ২০ লাখ টাকা দাবি করে তদন্ত কর্মকর্তা। এতো টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ফোন থেকে ওসির সাথেও কথা বলিয়েও দেন তিনি। ওসি তার কথা মত কাজ করতে বলে ফোন কেটে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সর্বশেষ কয়েক দফায় মামলার আসামিদের সাথে বৈঠক করেন এবং তাদের কাছ থেকে ক্যাশ ২০ লাখ টাকা নেন। আসামিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পরপরই তদন্ত কর্মকর্তা ৫ লাখ টাকা দাবি করেন বলেও জানান মামলার বাদী। টাকা না দিলে বাদীকে উক্ত মামলায় আসামি করা হবে হুমকি দিয়ে আসছিল বলে দাবি করেন তিনি।
মামলার আসামীরা হলেন, টেকনাফ হ্নীলা নয়া পাড়া সি ব্লক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শীর্ষ সন্ত্রাসী, মানবপাচারকারী ও একাধিক মামলার আসামি আনসার উল্লাহ, একই ক্যাম্পের পি ব্লকের মো. কাশিমের ছেলে সৈয়দ উল্লাহ, সি ব্লকের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে আব্দুর রসিদ, সুলতান আহমেদের ছেলে মো. হোসাইন, মো. আমিনের ছেলে ওমর ফারুকসহ অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন।
মামলা এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মামলার বাদী ও তার বাবা আবুল ফয়েজকে মেরে ফেলার ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এক পর্যায়ে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ১৩ তারিখ রাত ২ টা ৪৫ মিনিটের দিকে দরজার ফাঁক দিয়ে ২ রাউন্ড গুলি চালালে মো. ইসমাইলের বারো বছরের মেয়ে উম্মে সালমার পায়ে গুলি লাগে। এরপর হৈচৈ শুরু হলে এলোপাতাড়িভাবে গুলি ছুড়ে। এসময় আশেপাশের লোকজন ছোটাছুটি করে দৌড়াতে থাকলে তারা পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ২৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে আবুল ফয়েজকে শারীরিক অসুস্থতা জনিত চিকিৎসা শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথে পথিমধ্যে উল্লিখিত ঘটনাস্থলে পৌঁছাইলে এজাহারে উল্লিখিত বিবাদী আনসার উল্লাহ তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে আমাকে মো. ইসমাইলকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করলে উক্ত গুলি আবুল ফয়েজের পিঠে লেগে গুরুতর আহত হয়। এসময় তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ক্যাম্পস্থ গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করতে বলেন। এসময় তাকে সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
টেকনাফ থানা পুলিশ মৃত্যুর ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উপস্থিত হয়ে ভিকটিম আবুল ফয়েজ (৬৫) এর সুরতহাল প্রস্তুত করেন এবং ময়না তদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। এবং পরদিন মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং ৬৬/৮৯৩/২০২৩ ।
মামলার বাদী মো: ইসমাইল (৩৭), টেকনাফ নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের ৮১৮ নং শেডের বাসিন্দা।
এদিকে মামলার বাদীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হবে জেনে নিরাপত্তার জন্য টেকনাফ নয়া পাড়া ক্যাম্প থেকে উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশ্রয় নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তার পরিবার।
এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই আজহারুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওসমান গণি বলেন, এরকম সেনসিটিভ হত্যা মামলা নিয়ে বাণিজ্য করার প্রশ্নই উঠে না। আমরা সব ধরনের তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেছি। শীঘ্রই আদালতে অভিযোগ পত্র দেওয়া হবে। মামলার তদন্তের জন্য টাকা চাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। তদন্ত কর্মকর্তা কোন টাকা নিয়েছে বা চেয়েছে কিনা আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়াও ওসি বলেন, মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের সময় সাক্ষীর স্বাক্ষর প্রয়োজন হলেও আমরা কোন সাক্ষীকে পাচ্ছি না। মামলার বাদীকেও একাধিকবার যোগাযোগ করতে বললেও তিনি আসছেন না।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর