
শিল্পাঞ্চল সাভারের আশুলিয়ার কারখানাগুলোতে কাজে যোগ দিয়েছে শ্রমিককেরা। আগের থেকে সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে শ্রমিক বিক্ষোভ, ভাংচুরের জেরে আজ ২০ টি শিল্প কারখানা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১। এদিকে চলমান শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনের প্রেক্ষিতে শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করছেন।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর কর্মকর্তারা জানান সকালে নির্ধারিত সময়ে কাজে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানার শ্রমিকেরা। তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় কাজ করছেন। তবে আজও বাংলাদেশ শ্রম আইন -২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় ১৮ টি কারখানা এবং সাধারণ ছুটি রয়েছে ২ টি কারখানা। বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতসহ বিভিন্ন ধরনের কিছু সংখ্যক কারখানাও রয়েছে। তবে অধিকাংশই তৈরি পোশাক কারখানা।
আজ সরেজমিনে ঘুরে আশুলিয়ার কাঠগড়া, জিরাবো, নরসিংহপুর, জামগড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসকল এলাকার বিভিন্ন কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, বিজিপি ও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। সড়কে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব সদস্যরা।
সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে জিরাবো এলাকায় মাসকট গ্রুপের কারখানার সামনের ফটকে শ্রমিকদের অবস্থান করতে দেখা যায়। পাশেই অবস্থান নিয়েছে শিল্প পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
কারখানার এক নারী শ্রমিক বলেন, ৭ তারিখে বেতন দেয়ার জন্য কারখানা সবাই ম্যানেজমেন্টকে বলি। তাঁরা বলে ৩-৪ দিন দেরি হবে। এরপর ঠিকই পরদিন বেতন দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। কারখানায় কেউ ভাঙচুর তো করে নাই এরপর কোন গ্যাঞ্জামও হয় নাই তাহলে বন্ধ কইরা কেন রাখছে। আমরা চাই কারখানা খোলে দেয়া হোক।
এদিকে শিল্পকারখানার উদ্ভূত সংকট নিরসনে কিছু কারখানার মালিকপক্ষের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন শ্রমিক নেতারা।
এব্যাপারে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন-বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন বলেন, গতকাল বিজিএমইএ উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনের বিষয়ে সভা হয়। ওই সভায় সকল কারখানা খোলে দেয়ার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি কোন কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে মালিক চাইলে আইন অনুযায়ী শুধু সেই কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন। তবে আমরা জেনেছি কয়েকটি কারখানা এখনও বন্ধ রয়েছে। সমস্যা সমাধানে কারখানা খোলে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। উভয় পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলে সমাধান সম্ভব নয়।
এবিষয়ে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বেশ কিছু শিল্প কারখানায় অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বনিবনা না হওয়ায় আজ বাংলাদেশ শ্রম আইন ১৩ (১) ধারায় ১৮ টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ২ টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ কারখানাগুলোর অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা। তবে বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতসহ বিভিন্ন ধরনের কিছু সংখ্যক কারখানাও রয়েছে।
আশুলিয়া শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা: এদিকে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষিতে শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা সকাল ১১ টার দিকে আশুলিয়ার অনন্ত গ্রুপের কারখানা পরিদর্শন করেন। তাঁরা ওই কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
পরিদর্শনকালে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক মো. সবুর হোসেন বলেন, গত বুধবার ১১ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়। পরদিন কমিটির কার্যপরিধি ও কার্য পরিচালনার বিষয় নিয়ে সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে শিল্পাঞ্চলের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে আশুলিয়ায় এসেছি। কারখানার মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের দাবি, আপত্তি, অভিযোগ আমরা জানতে চাই। এগুলো জানানোর জন্য আমাদের হটলাইন ১৬৩৫৭ নাম্বার, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে, ই-মেইল আইডি আছে, ডাকযোগেও জানানো যাবে। এসকল বিষয়ে সকলকে জানানোর জন্য আশুলিয়ায় এসেছি। আমরা চাই তাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিদাওয়া জেনে সরকারের কাছে তুলে ধরতে। যদি সেগুলো তাৎক্ষণিক পূরণ করার সুযোগ থাকে তবে সেটিও আমরা সুপারিশ করবো। যদি সময় লাগে তবে সেটিও সরকারকে জানাবো। আমাদের প্রত্যাশা কারখানাগুলোতে কাজ চলবে শ্রমিকেরা কাজ করবেন। আমরা আশাবাদী আজ থেকেই সকল কারখানা খুলে যাবে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর