
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি- বাঙালি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উভয় পক্ষের ৮ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসময় দুর্বৃত্ত কর্তৃক লাগানো অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উভয় পক্ষের প্রায় ২৫-৩০টি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। এ ঘটনায় পরস্পরবিরোধী অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলার লারমা স্কয়ার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে দীঘিনালায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
গতকাল বুধবার খাগড়াছড়িতে চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়। স্থানীয়রা জানায়, পূর্ব নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে স্থানীয় পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আসা সাধারণ বাঙালি শিক্ষার্থীদের উপর পরিকল্পিতভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া করে। এতে আন্দোলনকারী সাধারণ বাঙালি শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ ঘটনায় কয়েকজন বাঙালি শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে বোয়ালখালী বাজার এলাকা ও আশপাশ এলাকা থেকে বাঙালি লোকজন জড়ো হয় বাসটার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্তে। তখন বিভিন্ন এলাকা থেকে পাহাড়ি লোকজনও জড়ো হতে থাকে লারমা স্কয়ারে। এক পর্যায়ে দাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন লারমা স্কয়ার থেকে বাঙালিদের দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসীরা। এতে মুহূর্তে এলাকায় চরম আতঙ্ক এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আর তা ছড়িয়ে পড়ে উপজেলা জুড়ে। এর কিছুক্ষণ পরেই দুর্বৃত্তরা লারমা স্কয়ারে সড়ক ও জনপদের জায়গায় গড়ে উঠা অস্থায়ী ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান দোকান-পাটে আগুন দেয়। পরে তাৎক্ষণিকতায় পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেসামাল অবস্থায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামেন। ততক্ষণে মার্কেটটির প্রায় ২৫-৩০টি দোকানপাট প্রায় পুড়ে যায়। মার্কেটটিতে পাহাড়ি-বাঙালি উভয়পক্ষের দোকানপাট ছিল।
আগুন লাগার ঘটনাস্থল লারমা স্কয়ার থেকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দূরত্ব ছিল মাত্র ৫০০ মিটারের কাছাকাছি। খুব কাছে থেকেও ফায়ার সার্ভিস যথাসময়ে না পৌঁছায় আগুনে আরও কিছু অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, গত রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাঙালি ও পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বেশকিছু ফেসবুক আইডি থেকে দীঘিনালায় সংঘাত ঘটানোর উগ্রতা ছড়ানো হয়েছে। অথচ এই বিষয়ে প্রশাসনের এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। এমনকি আজ দুপুর থেকেও যদি সমন্বিত কোন সভা বা মতবিনিময় আয়োজন করা হতো তাহলে অবশ্যই এই সংঘাত ও ক্ষতি এড়ানো যেতো।
এই ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ ঘটনায় পরস্পর পরস্পরকে দুষছেন।
দীঘিনালা থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. নুরুল হক বলেন, 'আজকে দীঘিনালায় একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। যা কখনো কাম্য নয়। বর্তমানে পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মাঠে সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশ টহলে রয়েছে। সবাই মিলে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে চেষ্টা করছি।'
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর