
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙ্গালী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এ পর্যন্ত ৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের আহত হয়েছেন অন্তত আরও ১৭ জন।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ৫ জনকে। এর মধ্যে একজনকে রাখা হয়েছে আইসিওতে। নিহতরা হলেন, ধনঞ্জয় চাকমা (৫০), রুবেল ত্রিপুরা (২১) ও জুনান চাকমা (২০)।
গতকাল দুর্বৃত্ত কর্তৃক দেওয়া আগুনে দীঘিনালায় ১০৪টি দোকান আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি দোকান বাঙ্গালীর এবং ৫১টি দোকান ছিল পাহাড়ি সম্প্রদায়ের। এ ঘটনা উভয়েই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেকে। ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে সরকারিভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দীঘিনালা জোন কমান্ডার, স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনপ্রতিনিধিরা সহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা রুখতে দুপুর ২ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জেলা পৌর শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
এদিকে শুক্রবার বিকালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে পাহাড়ি-বাঙ্গালী সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান এর সভাপতিত্বে এতে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান হাসান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এসময় খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়া, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার, মারমা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ম্রাসাথোয়াই মারমা, চাকমা প্রতিনিধি অনিমেষ চাকমা এবং ত্রিপুরা প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।
মতবিনিময়ে বক্তারা, ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হতাহতের ঘটনায় খুবই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারে উপর জোর দেন। এসময় সবাইকে আতংকিত না হয়ে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, 'আপনারা কেউ আতঙ্কিত হবেন না, গুজবে কান দিবেন না। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শান্তি-সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রাখতে দীঘিনালায় আমরা উভয় পক্ষের ৪০ জন সদস্যকে নিয়ে একটি শান্তি কমিটি গঠন করেছি। আশা করি পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের আমরা সরকারি সহায়তার আওতায় আনবো।'
খাগড়াছড়ি রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান হাসান বলেন, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, প্রশাসন যৌথবাহিনী কাজ করছে। এ ছাড়া স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, হেডম্যান-কার্বারী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে জরুরি আইনশৃঙ্খলা সভা করা হয়েছে। সকলে মিলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা। সেনাবাহিনী সবসময় জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে আমরা কাজ করছি।'
তিনি আরও বলেন, 'গুজব অস্ত্রের চেয়ে মারাত্মক। বর্তমানে ফেসবুক গুজব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আপনারা গুজবে পা দেবেন না। গুজব থেকে দূরে থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি’।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর