
পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রদায়িক সংঘাতে স্থবির হয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি। গত বৃহস্পতিবার দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি সদরে সংঘর্ষ, গুলাগুলির ঘটনায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শহরে অভ্যন্তরীণভাবে কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা, সিএনজি ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও দূরপাল্লা ও আঞ্চলিক সড়কের সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। খাগড়াছড়ি থেকে ছেড়ে যায়নি ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী কোনো যানবাহন। বিভিন্ন প্রান্তে আটকে আছে কাঁচামাল বহনকারী গাড়ি। খাগড়াছড়ি বাজারে দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতা শূন্য দিন কাটছে ব্যবসায়ীদের। এখনো পাহাড়ি-বাঙালিদের মনে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানি ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এবং এসব ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবিতে শুক্রবার খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা’ নামে একটি সংগঠন। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার সকাল থেকে চলছে সড়ক অবরোধ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের বিভিন্ন রাস্তার মুখে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া শহরের শাপলা চত্বর, চেঙ্গী স্কয়ার, স্বনির্ভর, জিরো মাইল এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
এদিকে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকাল সোয়া ৪টায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায়ের উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ, পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, চট্টগ্রাম ২৪ ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মাইনুর রহমান, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, মং সার্কেল চীপ সাচিংপ্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়া সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন মতামত প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়িতে গত বুধবার চুরির অভিযোগে পিটুনিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এর জেরে বৃহস্পতিবার বিকালে দীঘিনালা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এসময় মিছিলে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ অগ্নিসংযোগ ও রাতের গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় আরও ১৫ জন।
ঐদিন রাতে দূর্বৃত্রদের দেওয়া আগুনে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে সড়ক ও জনপদের সরকারি জায়গায় গড়ে উঠা অস্থায়ী মার্কেটে পুড়ে যায় ১০৪টি দোকান। এর মধ্যে ৫৩টি দোকান ছিল বাঙালিদের এবং ৫১টি দোকান ছিল পাহাড়িদের। এতে সবকিছু হারিয়ে সর্বস্বান্ত হন ব্যবসায়ীরা। এদিকে ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা রুখতে শুক্রবার দুপুর ২ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জেলা পৌর শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর