
খাগড়াছড়িতে আলোচিত মামুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা আরও ১০/১২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিহতের স্ত্রী মুক্তা আক্তার বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। তবে মামলা আগে হলেও কাউকে কিছু কেন জানতে দেওয়া হয়নি সে বিষয়ে কিছু বলেনি পুলিশ।
মামলায় আসামীরা হলেন- গাড়ি চালক মো. শাকিল (২৭), মো. রফিকুল আলম (৫৬) ও মো. দিদারুল আলম (৪৮)।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন মৃধা মামলা হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, '১৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিহতের স্ত্রী মুক্তা আক্তার মামলাটি দায়ের করেন।'
এদিকে খাগড়াছড়ির সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। গত শনিবার এবং রবিবার জেলার কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সড়ক অবরোধকারীদের সমর্থনে কিছু পিকেটার জেলা সদরের বাহিরে ১টি এলাকায় গাছ কেটে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করতে চাইলে নিরাপত্তাবাহিনীর টহল দেখে তারা পালিয়ে যায়। তবে রাত হলে পাহাড়ে বাড়ে গুজব। গুজবে ছড়ানো বিভিন্ন প্রোপাগাণ্ডায় আতংকিত রাত পার করেন দুর্গম প্রান্তের পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠীর লোকজন।
গেল শুক্রবার খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা’ নামে একটি সংগঠন। সেই কর্মসূচিতে সমর্থন জানায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এতে আরও চাঙ্গা হয়ে যায় অবরোধ কর্মসূচি। শনিবার সকাল ৬টা থেকে চলছে সড়ক অবরোধ। মূলত ইউপিডিএফ আতংকেই কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে অবরোধ। এতে ভোগান্তিতে রয়েছে জেলার কয়েক লাখ মানুষ। উপজেলা থেকে অসুস্থ রোগীরাও আতংকে আসতে পারছেনা জেলা সদর হাসপাতালে। কি হচ্ছে, কি হবে সবদিকে শুধু এমন আতংক আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
এতে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লা ও আঞ্চলিক সড়কের যান চলাচল। খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন প্রান্তে আটকে আছে কাচামাল বহনকারী গাড়ি। আসতে পারছেনা ফুয়েল চালিত গাড়িও। খাগড়াছড়ি বাজারে দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতা শূন্য দিন কাটছে অনেকের।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, 'বর্তমানে খাগড়াছড়ি অনেক শান্ত রয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি মিলে শান্তি কমিটি করে সম্প্রীতি বজায় রাখতে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি পাহাড়ে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে আমরা আর সেটার পুনরাবৃত্তি চাইনা। আমরা সবাই মিলেমিশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রেখে চলতে চাই। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আর খাগড়াছড়ির মামুন হত্যাকাণ্ডে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।'
উল্লেখ, ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. মামুনকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জেরে দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর এবং রাঙ্গামাটি সদরে সহিংসতায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে খাগড়াছড়ি সদরে ২জন এবং দীঘিনালায় ১জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়। এ ঘটনায় দুর্বৃত্ত কর্তৃক লাগানো আগুনে দীঘিনালা লারমা স্কয়ারে সড়ক ও জনপদের সরকারি জায়গায় গড়ে উঠা অস্থায়ী মার্কেটে নির্মিত ১০৪টি দোকানপাট পুড়ে যায়। সহিংসতার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়িতে ৩ জন ও রাঙামাটি একজনসহ ৪ জন নিহত হয়।
এ সহিংসতা রোধে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায়ের উপদেষ্টা এ.এফ. হাসান আরিফ, পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, চট্টগ্রাম ২৪ ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মাইনুর রহমান, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মোঃ আমান হাসান, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, মং সার্কেল চীফ সাচিংপ্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল সহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও উর্ধ্বতন কর্মকতারা বক্তব্য রাখেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর