
কাজী হাবিউল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন পদত্যাগের পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা।এদিকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নতুন নির্বাচন কমিশনের(ইসি) অপেক্ষায় রয়েছে ভোট আয়োজনকারী সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান,আইন অনুযায়ী কমিশনের অনুমোদনক্রমে প্রতিবছর দুই জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাযর্ক্রম পরিচালনার করা হয়। এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের পর যাচাই-বাছাই, দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর চুড়ান্ত ভোটার তালিকা ২ মার্চ প্রকাশ করি আমরা।যদি জানুয়ারির আগে নতুন কমিশন গঠন না করা হয় তাহলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালানাগাদ করাটাও এক প্রকার অসম্ভব হয়ে যাবে।কারণ কমিশনের অনুমোদন ছাড়া এ কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন,কমিশন নাই। এখন কমিশনের অনুমোদন আগ পর্যন্ত হয়তো আমরা উপদেষ্টা পরিষদ পর্যন্ত আমরা যেতে পারি। আর তারা তো আইন পরিবর্তন করতে পারবে না। সংসদে যে পাশকরা আইনে যে বিধান আছে, সেটা তারা পরিবর্তনও করতে পারবে না।
এক্ষেত্রে কমিশন ছাড়া ভোটার হালনাগাদ করা যাবে কি-না? জানতে তিনি জানান,ইসির অনুপরিস্থিতিতে বিকল্প কী করা যেতে পারে তা পর্যালোচনা না করে বলা যাচ্ছে না। করণীয় বলতে সরকার যদি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতা দেয়, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আমার আসলে কোনটি করবো সেটি পর্যালোচনা না করে বলা যাবে না। কমিশন না থাকায় এখন এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে,আজ (বুধবার, ০২ অক্টোবর) ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা সহজীকরণ এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনে।যেখানে ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে আলোচনা করবে কমিশন ও মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তারা।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবেন কি-না? জানতে চাইলে ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো.মাহবুব আলম তালুকদার,অবশ্যই করবো।তবে সরকার যে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সে কমিশনের কোনো সুপারিশ আসবে কি-না?আবার তফসিল ঘোষনা কবে করবে না করবে সে বিষয়টিও কিন্তু রয়েছে।তবে আমাদের যে রুটিন কার্যক্রম রয়েছে সেটি আমরা করে যাব।এছাড়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা প্রতিনিয়ত করছে।আইন অনুযায়ী যে কার্যকর্ম ওটা আমরা করবো।ওটা তো আমরা বন্ধ করিনি।
ভোটার তালিকা সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমাদের তো এটি ধারাবাহিক কার্যক্রম আমরা সারা বছর করছি। এটা কেউ বললেও করবো,না বললেও করবো।এটা আমাদের জাতীয় কাজ।
এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হবে কি-না?জানতে চাইলে ইসি সচিব শফিউল আজিম জানান,২০০৯ সালে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী জানুয়ারিতে শুরু হবে। সে সময়টা এখনো আসেনি। আমাদের রুটিন আছে ২ জানুয়ারি থেকে করা। এখন প্রতিদিনের হালানাগাদ করছি।
কমিশনের অনুমোদন ছাড়া সেটা ঘোষণা করবেন কিনা, হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, এটা কমিশনের কাজ। সুতরাং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগা করার সিদ্ধান্ত কমিশন নেবে। এখন তো আইনে আমার লিগ্যাল অথরিটি নেই।
বর্তমানে কমিশনহীন ইসিতে আইনে নির্ধারিত রুটিন কাজগুলোই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব শফিউল আজিম। তিনি আরো বলেন,ভোটার তালিকা হালনাগাদে উপজাত হচ্ছে এনআইডি। আজকে পর্যন্ত ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫৬০জন ভোটার হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে আমরা ভোটার করছি। মৃত মানুষ তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ায় রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ দেন। সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী সেই সময় শেষ হবে আগামী ৪ নভেম্বর। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয় কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়ায় কাজী হাবিউল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন পদত্যাগ করেন। তার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল 'আলোচনার জন্য কাউকে
পাওয়া যাচ্ছে না' উল্লেখ করে পত্রিকায় লেখা এক কলামে সাংবিধানিক সংকট উত্তরণে বেসামরিক ফরমান জারি করার আহ্বান জানান। তিনি সেখানে বলেন, সংবিধানে উল্লেখিত মেয়াদের মধ্যে ভোটের আয়োজন না করলে নির্বাচন কমিশনের মৃত্যুদণ্ড হওয়ার বিধান রয়েছে। এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনিসহ পুরো কমিশন পদত্যাগ করেন।
সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার র ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। তবে হালনাগাদ কার্যক্রমের বাইরেও অনেকে ভোটার হয়েছেন। এক্ষেত্রে বর্তমানে প্রকৃত ভোটার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর