
ধর্ষণের অভিযোগ ও গুজব ছড়িয়ে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহম্মদ সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে পাহাড়ি শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা। শিক্ষকের এ মৃত্যুর ঘটনার জেরে পাহাড়ি ও বাঙালি দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় বুধবার (২ অক্টোবর) খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি, সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি এবং টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন প্রতিনিধি।
এদিকে খাগড়াছড়িতে শান্তি-সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান। বুধবার দুপুরে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কনফারেন্স রুমে বাঙালি নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বিশেষ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
মতবিনিময় সভায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান বলেন, ‘মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষক আবুল হাসনাত মো. সোহেলকে ধর্ষণের অভিযোগে পাহাড়ি দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলায় পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ও দাঙ্গার জন্ম দিয়েছে। যা সবার জন্যই অকল্যাণকর।' এসময় খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার সংঘাত ও সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তার আহ্বান জানান।'
এঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগে একটি এবং সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা ও হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরও একটি মামলা দায়ের করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। অন্যদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় জারি করা ১৪৪ ধারা বিকাল ৩টা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে বুধবার সকালে খাগড়াছড়ি বাজার ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েলসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার বাসিন্দা সুভাষ চাকমা বলেন, 'ধর্ষণের বিষয়টি গুজব হোক আর অভিযোগ যাই হোক না কেন শিক্ষককে হত্যা করে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া একদম ঠিক হয়নি। অতি উৎসাহীরা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। সবার প্রশাসনের উপর আস্থা রাখা উচিত। অশান্তি কাম্য নয়।'
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘বর্তমানে খাগড়াছড়ির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। নিহত শিক্ষকের পরিবার এখনো খাগড়াছড়ি এসে পৌঁছেনি। তারা আসলে হত্যা মামলা নেওয়া হবে। শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই।'
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘উভয় পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আমরা ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সরজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আমরা পরিদর্শন করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করার কাজ চলমান রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য কমিটি করা হয়েছে। বর্তমানে খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিশেষ বিবেচনায় আমরা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যা করে পাহাড়ি শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা। এ ঘটনা জেরে বিকেল থেকে শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। এসময় কল্যাণপুর এলাকায় পাহাড়িদের মধ্য থেকে সন্ত্রাসীরা বাঙালিদের দিকে গুলি ছুড়লে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। সংঘর্ষে গাড়ি ভাঙচুর ও কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এসময় কয়েকটি দোকানের মালামাল সড়কে ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুন দেওয়ার পাশাপাশি কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করা হয়। কেএসটিসি হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর