
নবীগঞ্জের বিএনপি নেতা আজমত আলী ঢাকায় পুলিশের গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ৫ই আগস্ট সোমবার দুপুরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিলে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে সে মৃত্যু বরণ করেন।
দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও কান্না থামছে না শহীদ আজমত আলীর পরিবারের। অভাব অনঠনের মাঝে ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছেন আজমত আলীর স্ত্রী রবিরুন বেগম। তারা এখনও কোন সরকারি সাহায্য পাননি।
সরকার কর্তৃক গঠিত জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেখে এখনো যোগাযোগ করা হয়নি। যদিও বেসরকারি ভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করা হয়েছে। সরকারী তালিকাভুক্ত একজন শহীদ হিসাবে তাকে স্বীকৃতি ও সহযোগিতা চান আজমতের পরিবার।
নিহত আজমত আলী নবীগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর গ্রামের মজর উল্লার ছেলে। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে আজমত আলী তৃতীয় সন্তান। পৃথক সংসারে আজমত আলী তার দুই ছেলে মাহফুজ আলম মাহিদ (১৮), মাহিনুর আলম মাহিন (১২) ও এক মেয়ে নাদিয়া আক্তার (১৫) এবং অসুস্থ স্ত্রী রবিরুন বেগমকে নিয়ে বসবাস করতেন। জীবন জীবিকার তাগিদে ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আজমত আলী ঢাকা যাত্রাবাড়ী এলাকায় মাছের ব্যবসা করতেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নিলে ৫ই আগস্ট ঢাকা যাত্রাবাড়ী এলাকায় মিছিলে যোগ দেন আজমত আলী। ওই সময় পুলিশে বেপরোয়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন আজমত আলী। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কান্নার রুল পড়ে ওই পরিবারসহ গ্রামবাসীর মাঝে। অবুঝ সন্তানদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে। অবুঝ সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শহীদ আজমত আলীর স্ত্রী।
নিহত আজমত আলীর অসুস্থ স্ত্রী রবিরুন বেগম জানান,কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গৌছ ও জামায়েত ইসলাম বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা ছাড়া সরকারিভাবে কোন অনুদান এখনও পাননি। অর্থের অভাবে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়াও বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা জিকে গৌছ ব্যক্তিগত ভাবে এক লক্ষ টাকা ও জামাত ইসলাম তাদের দলীয় বরাদ্ধ থেকে দুই লাখ প্রদান করেছেন।
এদিকে শহীদ আজমত আলীর স্ত্রী রবিরুন বেগমের সাথে আলোচনা করলে অজানা হৃদয় বিদায়ক আরও তথ্য জানান। রবিরুন বেগম বলেন, তার স্বামী শহীদ আজমত আলী ঘটনার আগের দিন (৪ আগস্ট রবিবার) রাতে শেষবারের মতো ফোনে আলাপ হয়। প্রথমে তার মেয়ে নাদিয়া আক্তারের সাথে কথা বলেন। নাদিয়া আক্তার তার বাবা’র কাছে একটি বোরকা আনার জন্য বলেন। অপর প্রান্ত থেকে আজমত আলী মেয়ে’কে পরদিন সোমবার বোরকা নিয়ে আসবেন বলেও জানান। কিন্তু ৫ই আগস্ট সোমবার বোরকার পরিবর্তে লাশ হয়ে ফিরলেন নাদিয়া আক্তারের বাবা আজমত আলী।
সকালে তিনি স্ত্রী রবিরুন বেগমকে মোবাইলে বলেন, ঢাকার পরিস্থিতি খুব খারাপ, তখন স্ত্রী রুবিনা তাকে সাবধানে থাকতে বলেন এবং কোন মিছিল, মিটিংয়ে যেতে বারনও করেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা।
তিনি বলেন, তার স্বামী আজমত আলী এমনই। তার ইচ্ছা মতো চলতো। তবে স্বামী হিসেবে স্ত্রী, সন্তানদের প্রতি খুবই দায়িত্বশীল ছিলেন। অভাবের সংসার, নুন আনতে পানতা পুড়ায়। যার কারণে ৪/৫ বছর যাবৎ ঢাকায় যাত্রাবাড়ী এলাকায় মাছের ব্যবসা করতেন। তার স্বপ্ন ছিল ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবে। সেই স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেলো।
তিনি বলেন, অবুঝ মেয়ে নাদিয়া আক্তার তার বাবা’র কবরে পাশে গিয়ে কান্নাকাটি করে বলে, বাবা তুমি ফিরে এসো, আমার বোরকা লাগবে না। আমি কখনও তোমাকে বোরকার জন্য বলবো না বাবা। তুমি ফিরে এসো, তুমি ফিরে এসো।
তার বড় ছেলে মাহফুজ আলম মাহিদ (১৮) বলেন, সরকার কর্তৃক গঠিত জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেখে এখনো যোগাযোগ করা হয়নি। যদিও বেসরকারি ভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করা হয়েছে। সরকারী তালিকাভুক্ত একজন শহীদ হিসাবে তার বাবার স্বীকৃতি ও সহযোগিতা চান ।
নিহত আজমত আলীর বড় ভাই ছাবু মিয়া বলেন, আমরা কিছুই চাই না। আমার ভাইকে ফিরে পেতে চাই। একমাত্র বোন কল্পনা বেগম, ভাই শহীদ আজমত আলীর কথা মনে করে বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নির্বাক হয়ে বাবা আজমত আলী আসার অপেক্ষায় পথের দিকে তাকিয়ে রয়েছে শিশু সন্তান মাহিনুর আলম মাহিন (১২)।
শহীদ হওয়ার দীর্ঘ ৫ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও কান্না থামছে না এই শহীদ পরিবারের। এলাকাবাসী অসহায় শহীদ আজমত আলীর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর