
শীত এলেও অতিথি পাখির দেখা পাওয়া যায়নি পাখির অভয়াশ্রম খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরে। অথচ এই সময়ে তুষারপাত ও শৈত্যপ্রবাহ থেকে নিজেদের রক্ষার তাগিদে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শীত প্রধান দেশ সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া,চীন, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি আসত।
পাখির কলকাকলিতে আশপাশের এলাকা উজ্জীবিত হয়ে উঠলেও এখনও হাওরটি অতিথি পাখি শূন্য। এখন হুমকির মুখে অতিথি পাখিদের জীবন। এই বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন হাওরবাসী।
টাংগুয়ার হাওরটি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা (বেশীর ভাগ অংশ)ও মধ্যনগড় উপজেলায়(কিছু অংশ নিয়ে) অবস্থান। এ হাওরটি ইউনেস্কোর ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য,দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসাবে স্বীকৃত।
পাখি না আসার কারণ হিসাবে টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দাগনের অভিযোগ করে জানিয়েছেন,এই হাওরটি পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে দেশ বিদেশে পরিচিত হলেও পাখিদের জীবনের নিরাপত্ত,খাদ্য,বাসস্থানের অভাব,হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট, অপরিকল্পিত পর্যটনের বিকাশ,পেশাদার পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য,স্থানীয়দের উদাসিনতাসহ নানান কারণেই পরিযায়ী পাখি আসা কমছে।
এছাড়াও চলতি বছরে টাঙ্গুয়ার হাওরের পাখির অভয়াশ্রম লেছুয়ামারা বিলের আশাপাশ ও তেকুইন্যা বেরবেরিয়া বিলের আশাপাশ এক শ্রেণির জেলেরা দখল করে বিভিন্ন ফাঁদ পেতে মৎস্য ও অতিথি পাখি শিকার করছে একটি চক্র। এতে করে পাখিদের নিরাপত্তার ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। শুধু এবছরেই নয় গত কয়েক বছর ধরেই শিকারিদের শিকারে পরিনত হয়েছে অতিথি পাখি। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতেও টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নিবে অতিথি পাখিরা।
জানাগেছে,টাঙ্গুয়ার হাওরে এক সময় প্রায় ২১৯ প্রজাতির পাখি আসত। এর মধ্যে ৯৮ প্রজাতি পরিযায়ী,১২১ প্রজাতির দেশি ও ২২ প্রজাতির হাঁসজাত পাখি বিচরণ করত। আগত পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ফিশিং ঈগল,মৌলভীহাঁস, পিয়ারী,কাইম,রামকুড়া,বালিহাঁস,লেঞ্জা, চোখাচোখি,বেগুনি কালেম প্রভৃতি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,সাধারনত প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে হালকা শীতের আমেজ শুরু হতেই টাঙ্গুয়ার হাওরে পরিযায়ী পাখির আসা শুরু হয়। রাতে পাখির ডাকার শব্দ ও শুনা যেত। মাঘ মাসের শেষ পর্যন্ত তাদের পদচারণা আর গরমে চলে যেত অতিথি পাখি। এসব পরিযায়ী পাখি কখনো জলকেলি,কখনো খুনসুটি কিংবা খাদ্যের সন্ধানে যেমন দিনে তেমনি রাতে এক হাওর থেকে অন্য হাওরে গলায় স্বর তুলে ঝাঁকে ঝাঁকে আকাশে উড়ে বেড়াত। শুধু এবছর নয় গত কয়েক বছর ধরেই অতিথি পাখি শিকারীদের শিকারে আসছে না আর যা আসে তা অতিনগন্য।
টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা জামিল মিয়া জানিয়েছেন,সংরক্ষিত হওয়ার পরও স্থানীয় পাখি শিকারিদের উৎপাত ও রাতে বিভিন্ন রকমের ফাঁদ তৈরি করে মাছ ও পাখি শিকার, অপরিকল্পিত পর্যটন ব্যবস্থাপনা,পাখির আবাসস্থল বিনষ্ট,খাদ্য সংকট সর্বোপরি পাখির নিরাপত্তাহীনতার কারণেই টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অতিথি পাখি। এছাড়াও হাওরের জীব বৈচিত্র্য,পরিবেশ ও হাওর তীরবর্তী মানুষদেরকে সচেতনতা ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন না সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন গুলো এর প্রভাব পড়ছে হাওরে।
নুরুল ইসলাম বাঘা জানান,এই সময়েই রাতের বেলার অতিথি পাখি ডাক শোনা যেত কিন্তু আজকে পর্যন্ত একটি পাখির ডাক শোনাতে পাই নি। টাংগুয়ার হাওর,শনি,মাটিয়ান হাওর সহ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে পাখির ডাক শোনা যায়নি। পাখি আসা কমে গেছে। পাখিদের নিরাপত্তা না থাকায়।
পরিবেশ আইনবিদ সমিতি(বেলা) সুনামগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক জসিম উদ্দিন বলেন,টাংগুয়ার হাওরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের সচেতন করা ও তাদের বিকল্প কর্মসংস্থনের ব্যবস্থা এবং দায়িত্বশীলদের কঠোর নরজধারী বাড়িয়ে মাছ ও পাখি শিকারিদের কঠোর হস্তে ধমন করে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ ঠিক করতে হবে।
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা আবুল হাসেম জানিয়েছেন, টাংগুয়ার হাওরে কোনো অনিয়মকারীকে ছাড় দেয়া হবে না। পাখি শিকার কারীদের কঠোর ভাবে দমন করা হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর