
গত বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে পরপর বন্যায় মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছেন কৃষক। আর আমন মৌসুমের শুরুতে বন্যার কারণে ধানের আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উৎপাদনে বড় প্রভাব পড়েছে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৯৪ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৮২ হাজার ৭৬৯ টন চাউল। বাকী ধান কাটা সম্পন্ন হলে উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ১২ লাখ ৭০ থেকে ৮০ হাজার টন। বন্যাসহ অন্যান্য কারণে প্রায় সোয়া এক লাখ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ না হওয়ায় উৎপাদনে এই প্রভাব পড়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তরে আমন মৌসুমে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৭৬ টন ধান চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, আমন উৎপাদনের মৌসুমে আবাদ কমে যাওয়ায় চালের উৎপাদন বিগত বছরের তুলনায় কম হচ্ছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে চালের দাম বেড়েছে কয়েক দফায়। যার কারণে সরকারের নির্ধারিত দামে চাল খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে বিক্রি করতে আগ্রহী হচ্ছেনা। যার কারণে সরকারের ধান-চাল কর্মসূচি কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী এই পাঁচ জেলায় গত বছরে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৯২৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও চলতি মৌসুমে আমন আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৫৮ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ১৭ হাজার ৪২৯ হেক্টর, উফশী ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৬ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৫২ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে চলতি আমন মৌসুমে মোট ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৮০ টন ধান চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ১৭০ টন, সিদ্ধ চাউল ৫৮ হাজার ৪১০ টন এবং আতপ চাউল কেনা হবে ২৯ হাজার টন। প্রায় দেড় শতাধিক চালকল মিল মালিকদের সাথে সিদ্ধ চাউল ৪৯ হাজার ৪ টন এবং আতপ চাউল ২৩ হাজার ৪৯৯ টন কেনার জন্য ইতিমধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। তবে ধানের পুরোটাই খাদ্য বিভাগ নিজ উদ্যোগে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের থেকে সংগ্রহ করবে। গত ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধান ৩২৭ টন, সিদ্ধ চাউল ১৩ হাজার ৭৩৯ টন এবং আতপ চাউল ৬ হাজার ২০৫ টন সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখন পর্যন্ত হাইব্রিড ১৬ হাজার ৯০৩ হেক্টর, উফশী ৩ লাখ ৫২ হাজার ৩৫১ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান ৪৮ হাজার ৯৩৯ হেক্টরসহ মোট ৪ লাখ ১৮ হাজার ১৯৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এই জমিতে এখন পর্যন্ত মোট উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৮২ হাজার ৭৬৯ টন চাউল উৎপাদন হয়েছে। যার মধ্যে হাইব্রীডে উৎপাদন হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৪৮ টন, উফশীতে ১০ লাখ ৪০ হাজার ১০৮ টন এবং স্থানীয় জাতের ধান থেকে উৎপাদন হয়েছে ৭৭ হাজার ১১৩ টন চাউলের উৎপাদন হয়েছে।
তথ্যমতে, আমন মৌসুমে সারা দেশ থেকে ৩৩ টাকা দরে ৩ লাখ মেট্রিক টন ধান, ৪৭ টাকা দরে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৪৬ টাকা দরে ১ লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করবে সরকার। ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান ও সিদ্ধ চাল এবং আতপ চাল ২০২৫ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হবে।
জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় এখন উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৫৫০ টন, কক্সবাজারে ২ লাখ ৫০ হাজার ৪৮৭ টন, নোয়াখালীতে ২ লাখ ৮২ হাজার ৮৪৭ টন, ফেনীতে ৭৭ হাজার ৪৯৯ টন এবং লক্ষীপুরে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৮৭ টন চাউল উৎপাদন হয়েছে। এই অঞ্চলের গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি হাইব্রিড ৩ দশমিক ৮৮ টন, উফশীতে ২ দশমিক ৯৫ টন এবং স্থানীয় জাতের গড় উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫৮ টন।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য আধি দপ্তরের সহকারী উপ পরিচালক দোলন দেব বলেন, সরকারের নির্ধারিত দামে আমরা ধান চাল ক্রয়ের নির্দেশনা দিচ্ছি। সরকার নির্ধারিত দাম থেকে বাজারে দাম বেশি হওয়ায় এখন আমরা সরবরাহ কম পাচ্ছি। চাষি যেখানে দাম বেশি পাবেন সেখানে ধান বিক্রি করবেন। তাছাড়া এবছর উৎপাদনের পরিমাণ কম। যেহেতু আমাদের হাতে আরো দুই মাস আছে সেজন্য আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে। সরকারের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করায় আমাদের মূল লক্ষ্য।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাছির উদ্দীন বলেন, বন্যা ও বীজতলা নষ্টের কারণে চলতি মৌসুমে আমন আবাদ কম হয়েছে। যার কারণে আমন মৌসুমে চাউলের উৎপাদন কমছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে। সেজন্য বোরো মৌসুমের উৎপাদন বাড়িয়ে ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর