
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
এছাড়া সমাবেশে ছাত্রলীগের সহযোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বিচারের দাবি জানানো হয়। বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। ভিসি চত্বরে হয়ে ঢাবির প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় মিছিল।
ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, যে শিক্ষকরা একটি শিক্ষিত জাতি গঠনের লক্ষ্যে কাজ না করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছিলেন, তারা এখনও বুক চেতিয়ে ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে হেঁটে বেড়ান। অথচ আমরা দেখেছিলাম, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কলাম লেখার কারণে ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ছাত্রদল ইতোমধ্যে কয়েকবার ছাত্রলীগ ও তাদের দোসরদের বিচারের দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। তখন আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয় কিন্তু আশ্বাসের কোনও বাস্তব রূপ আমরা দেখতে পাই না। ছাত্রদল শুধু স্মারকলিপি দিয়ে থেমে থাকবে না।
কালক্ষেপণ না করে বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদের হাতকে শক্তিশালী করতে যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানকে কলুষিত করেছেন, তাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করুন। না হলে আমাদের কর্মসূচি আগামীতে আর সহিষ্ণু কর্মসূচি থাকবে না।
সমাবেশে ঢাবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভূঁইয়া ইমন বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলে স্বৈরাচারের দোসররা এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে ঢাবি প্রশাসনের কাছে বিচারের জন্য গেলে তাদের নামে মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হতো।
এমনকি পরীক্ষার সময় ছাত্রলীগ স্বৈরাচারবিরোধী শিক্ষার্থীদের পুলিশে হাতে তুলে দিয়ে শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করতো। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ছাত্রদল বসে থাকবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারের দোসরদের প্রতিহত করবে।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসিরুদ্দিন শাওন, আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ছাত্রদলের নেতারা উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন। ওই স্মারক লিপিতে বলা হয়, “আপনি অবগত আছেন যে, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গণরুম, গেস্টরুম নামক নির্যাতনমুখী অপসংস্কৃতি এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে জোর-জবরদস্তি করে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ধরে নিয়ে যাবার অপরাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ।
তাদের অপশাসনের সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরাসরি মদদপুষ্ট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সহ বিরোধী সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে, যার ফলে অসংখ্যবার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পবিত্র ভূমি।
অকথ্য নির্যাতন ও নিয়মিত হুমকি-ধামকির মাধ্যমে সৃষ্ট ভীতিকর পরিবেশের কারণে অপূরণীয় শারিরীক, মানসিক ও একাডেমিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সহ বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীগণ সহ অসংখ্য সাধারণ শিক্ষার্থী। এমনকি বিভিন্ন সময়ে তাদের এহেন হামলা ও হেনস্তা থেকে রক্ষা পাননি নীতিপরায়ণ শিক্ষার্থীবান্ধব শ্রদ্ধেয় শিক্ষকেরাও।
আর ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে মদদ ও সহায়তা করেছে ছাত্রলীগের সাবেক পদধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট নীল দলের কতিপয় শিক্ষক।
উপরোক্ত এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে এসব সন্ত্রাসীগণ ও তাদের সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে বিগত ৫ আগস্টের পূর্বে ও পরবর্তীকালে থানা ও আদালতে মামলাও দায়ের করে রেখেছেন ভুক্তভোগী অনেক শিক্ষার্থী।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় ৯ মাস অতিক্রান্ত হবার পরেও সেসব মামলার প্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোন তৎপরতা লক্ষণীয় হচ্ছে না।
আর বিগত সময়ে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা এখনও বিভিন্ন আবাসিক হলে সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে বসবাস করছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের অপকর্মের সহযোগী শিক্ষকদের সহায়তায় নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে বলে আমরা লক্ষ্য করেছি- যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে।
অপর দিকে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত নানান উপায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সহ বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীগণ, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীগণ ও তাদের পরিবার পরিজনকে হয়রানি করছে, হুমকি-ধামকি দিচ্ছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে সহিংস হামলা করে আহত বা নিহত করছে।
এমনকি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ১৪৩২ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখের পূর্বে চারুকলা অনুষদের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে আনন্দ শোভাযাত্রার নির্মাণাধীন মোটিফে অগ্নিসংযোগের মতন ন্যাক্কারজনক ঘটনাও ঘটিয়েছে।
এরকম বিভিন্ন ঘটনায় এর আগেও আমরা প্রশাসনের শরণাপন্ন হলেও সেসবের সমাধান কিংবা আইনি লড়াইয়ে উপযুক্ত সহায়তা প্রদানের বিষয়ে কোনরূপ আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হয়নি। বরঞ্চ সময় যতো অতিবাহিত হচ্ছে পলাতক সন্ত্রাসীদের হয়রানি, হুমকি ধামকি আর সহিংসতার মাত্রা ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এমতাবস্থায়, মহোদয়ের নিকট বিনীত নিবেদন এই যে, আপনি ও আপনার নেতৃত্বাধীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনামলে এবং সর্বশেষ জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসী ও তার সহযোগী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বিচারহীনতার এই সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর