
বিদ্যালয়ের স্থায়ী ভবন নির্মাণে এক পক্ষ সাধুবাদ জানালে আরেকপক্ষের বাঁধায় আটকে আছে স্থায়ী ভবন নির্মাণ। ফলে শিক্ষার্থীদের ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
ধলেশ্বরী নদীর কোলঘেঁষে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালে। তীব্র নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে চরাঞ্চলের এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি।
বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে স্থায়ী ভবন নির্মাণ এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় শিক্ষা প্রকৌশল ও শিক্ষা প্রকৌশল মন্ত্রণালয় ঝুঁকিমুক্ত জায়গায় বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেন।
একই এলাকার নদীর পশ্চিম পাড়ে এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে ৮২ শতক জমি বিদ্যালয়ের নামে কেনেন। এরপর থেকেই বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে নতুন ভবনের কার্যক্রম শুরু করে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
এ কাজে বাধসাদে ধলেশ্বরী নদীর পূর্বপাড়ের বাসিন্দারা। কাজ আটকে যাওয়ার পরে পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দাদের কেনা জমিতে গ্রামবাসীর অর্থায়নে টিনশেড ভবন নির্মাণ হয়েছে। সকল শিক্ষকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নতুন ভবনে শুরু হয়েছে পাঠদান।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে প্রায় আড়াইশো শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত আছে। সিংহভাগ শিক্ষার্থী ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিমপাড়ের। বিদ্যালয়টি এপারে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই উপকৃত হয়েছে। পাশাপাশি এপারে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই একটিও।
ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি খোরশীদ আলম বলেন, ওপারে চরাঞ্চল। নদী ভাঙতে-ভাঙতে বিদ্যালয় পর্যন্ত এসে গেছে যে কোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটবে। আমাদের কমিটি এবং গ্রামবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে নিরাপদ স্থানে স্থায়ী ভবন হতে যাচ্ছে এই ভালো কাজকে অনেকেই হিংসা করছে। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এইখানে কোনো প্রকার রাজনীতি আনা ঠিক না।
এদিকে, বিদ্যালয়টিতে এপারের ছেলে-মেয়েই বেশি। এতদিন তো এরাই নদী পার হয়ে ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয় গেছে। বিদ্যালয় উপরেই করা যেত, কিন্তু জমি নেই। চরের ভেতর তো স্থায়ী ভবন করা যায় না তাই এপাড়ে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত হচ্ছে। বিষয়টা সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশনের মাধ্যমে পাস করা হয়েছে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম বলেন, আমরা ১১ জন শিক্ষক তারা প্রত্যেকেই পশ্চিম পাড়ে বিদ্যালয়টির নতুন ভবনে এসে পাঠদান শুরু করেছি। শিক্ষার্থীরাও এখানেই ক্লাস করছে। বিদ্যালয়টিতে স্থায়ী ভবন হওয়ার কথায় পূর্বপাড়ার লোকজন বাধসাধায় বিদ্যালয় সরকারি ভবন নির্মাণের কাজ পিছিয়েছে।
পরে গ্রামবাসী চাঁদা তুলে টিনশেড ভবন করেছে। পাঠদান শুরু হয়েছে তবে ওপারের শিক্ষার্থীরা এপারে আসছে না, তারা সংখ্যায় অনেক কম। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে একটা সুন্দর সমাধান চাই।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, স্থায়ী ভবন নির্মাণের দাবিতে প্রাথমিকভাবে বিদ্যালয়টির নদীর ওপারের (পশ্চিমবাড়) স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল। পূর্বপাড়ের বাসিন্দাদের আপত্তির দাবিতে জেলা প্রশাসক এবং মন্ত্রণালয় বরাবর পত্রের প্রেক্ষিতে বিষয়টা পুন তদন্তের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর ভিতর পশ্চিমপাড়ের বাসিন্দারা ভবন নির্মাণ করে পাঠদান শুরু করলে বিষয়টা নিয়ে দুপাড়ের বাসিন্দাদের মাঝেই উত্তপ্ততা বাড়ে। বিষয়টা আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় জানিয়েছি।
মন্ত্রণালয় থেকে আগামী রবিবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেবেন। যে সিদ্ধান্ত পাবো আমরা তা বাস্তবায়ন করব।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর