
আজ ১৩ মে, টাঙ্গাইলবাসীর জন্য এক শোকাবহ দিন। আজ থেকে ২৯ বছর আগে, ১৯৯৬ সালের এই দিনে ভয়াবহ এক টর্ণেডো কেড়ে নিয়েছিল শত শত প্রাণ, ধ্বংস করে দিয়েছিল হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও জনপদ। ক্ষণস্থায়ী হলেও ভয়াবহ শক্তিশালী ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগে টাঙ্গাইল জেলার পাঁচটি উপজেলা—গোপালপুর, কালিহাতী, বাসাইল, ঘাটাইল এবং সখীপুর—মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে সরকারি হিসাবে ২৩৭ জন এবং বেসরকারি হিসাবে আরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ৮৫ হাজার ঘরবাড়ি, ৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৭টি মসজিদ এবং ১৪টি মন্দির। অনেক পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, আজও যাদের স্মৃতি এই অঞ্চলের মানুষের মনে গেঁথে আছে গভীর দুঃখ ও বেদনার চিহ্ন হয়ে।
টর্ণেডোটি ১৯৯৬ সালের ১৩ মে, সোমবার বিকেল ৪টা ১৭ মিনিটে গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া গ্রাম থেকে শুরু হয়ে আলমনগর ও মির্জাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম অতিক্রম করে। মাত্র ২-৩ মিনিট স্থায়ী হলেও এতে গোপালপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়, প্রাণ হারান ১০৪ জন। ফসলের জমি, গবাদিপশু এবং সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
একই দিন বিকাল সোয়া ৫টার দিকে কালিহাতীর রামপুর ও কুকরাইল গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্ণেডোতে প্রাণ হারান আরও ১০৫ জন, যাদের মধ্যে একই পরিবারের একাধিক সদস্য ছিলেন। অনেককে দাফন করতে হয় গণকবরে।
বাসাইল উপজেলার মিরিকপুরে সেদিন ছিল ধান কাটার মৌসুম। বহিরাগত শ্রমিকদের একটি দল মিরিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদ্যালয়টি ঝড়ে বিধ্বস্ত হলে অনেকেই সেখানে চাপা পড়ে প্রাণ হারান। পরদিন তাদের মৃতদেহ খাল, পুকুর ও বিল থেকে উদ্ধার করা হয়। দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছিল সেদিনের বাতাস।
বাসাইল উপজেলায় প্রায় ১৭টি গ্রাম এবং প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার মানুষ এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হন। প্রায় তিন হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়, শত শত গবাদিপশু ও পোলট্রি প্রাণ হারায়, ধ্বংস হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নলকূপসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।
আজো ওই অঞ্চলের মানুষ কালো মেঘ দেখলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্রতিটি বছর ১৩ মে স্মরণে স্থানীয়ভাবে আয়োজিত হয় দোয়া-মাহফিল, প্রার্থনা, কাঙালিভোজ ও স্মরণসভা। এবারও গোপালপুরের আলমনগর, কালিহাতীর রামপুর এবং বাসাইলের মিরিকপুরে এসব কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর