
বাগেরহাটে জালিয়াতির মাধ্যমে ভারতীয় দুই সহোদর নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করায় অভিযোগে নির্বাচন কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে বাগেরহাট দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. সাইদুর রহমান বাদী হয়ে দুদক বাগেরহাট কার্যালয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় পারস্পরিক যোগসাজশে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিধিবহির্ভূতভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিরা হলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার তৎকালীন নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমান বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার, চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন এবং চিতলমারী উপজেলার আড়ুয়াবর্ণি গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন মোল্লা। এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিনকে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস না করা সত্ত্বেও শ্রী ফণি ভূষণ ওরফে মনি মণ্ডল এবং প্রতুল চন্দ্র মণ্ডলের নামের দুই সহোদরকে চিতলমারী থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ ও তা ব্যবহার করে একজনকে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়া হয়। ওই দুই জন ভারতীয় নাগরিক হলেও আড়ুয়াবর্ণি গ্রামে থাকা তাঁদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির জন্য স্থানীয় মোশাররফ হোসেন মোল্লা তাঁদের দেশে নিয়ে আসেন এবং ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করান।
দুদক সূত্র বলছে, ওই আবেদনে নির্ধারিত ফরমে ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি ফণিভূষণ মণ্ডল এবং ১৯৫৩ সালের ৪ এপ্রিল প্রতুল মণ্ডলের জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়। আবেদনের ৪ দিন পর তাঁদের দুই ভাইকে জন্মনিবন্ধন দেন চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন। এরপর ওই জন্মনিবন্ধন দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন তাঁরা। যার প্রেক্ষিতে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস হতে তাঁর নামে জাতীয় পরিচয়পত্র (নং: ১৯৪৮০১২০৮০০০০০০০১) ইস্যু করা হয়।
অনুসন্ধানকালে ফণিভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের নামে সৃষ্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফণিভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৪৮। কিন্তু তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয় ২০১৭ সালে, যা তাঁর জন্মের ৬৯ বছর পর। ভোটার তালিকা হতে বাদ পড়ার কারণ হিসেবে ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৩২ নম্বর ঘরে উল্লেখ করা হয়েছে “চিকিৎসার জন্য এলাকার বাইরে থাকা”। ফণিভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের বাবার নাম মৃত শশধর মণ্ডল দেওয়া হলেও তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম দেওয়া হয়েছে মৃত রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল। ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৭ নম্বর ঘরে বাবার মৃত্যু হয়েছে ১৯৪৪ সালে। সে অনুযায়ী, পিতার মৃত্যুর ৪ বছর পরে ফণিভূষণের জন্ম। ফরমে শনাক্তকারী হিসেবে সুষেন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে তাঁর স্বাক্ষর জাল করে শনাক্তকারী হিসেবে দেখানো হয়। আর ফণিভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয় বাগেরহাট পৌরসভার সোনাতলা গ্রাম। তবে তদন্তকালে দুদক ওই এলাকায় সেই ব্যক্তির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। এমন আরও অনেক জাল জালিয়াতি হয়েছে এবং ওই এনআইডি ব্যবহার করে ফণিভূষণকে দাতা দেখিয়ে সম্পত্তি বিক্রয় করা হয়েছে।
দুদক, বাগেরহাট কার্যালয়ের এডি মো. সাইদুর রহমান বলেন, পারস্পরিক যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে উক্ত ব্যক্তিকে বিধিবহির্ভূতভাবে জাল জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র করেছেন, যা দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে ওই মামলাটি করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর