
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় যুবলীগের এক কর্মীকে হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে যাওয়ার সময় দুই যুবককে ধরে গণপিটুনির পর পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। নিহত জাকির হোসেন (৪০) সোনাইমুড়ী উপজেলার ৮নং সোনাপুর ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের প্রয়াত রফিক উল্যার ছেলে। সোনাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ছিলেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে পাঁচ ব্যক্তি জাকিরের মরদেহ বেগমগঞ্জ উপজেলার হলবান পুলের পাশে খালে ফেলে পালানোর সময় স্থানীয় লোকজন তাদেরকে ধাওয়া করে। পরে তাদের মধ্যে দুই যুবককে ধরে গণপিটুনি দেয় লোকজন। খবর পেয়ে বেগমগঞ্জ থানা-পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
আটক দুই যুবক হলেন—নোয়াখালী সদর উপজেলার চর কাউনিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩৫) ও সোনাইমুড়ি উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে মো. বাবু (৩৩)। তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন নিহত জাকিরের মরদেহবাহী অটোরিকশার চালক।
এর আগে, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ৮-১০ জন লোক হাসানপুর থেকে জাকির হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর বিকেলে পাশের উপজেলায় খালে তার মরদেহ ফেলে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে জাকির হোসেন যুবলীগের প্রভাবশালী কর্মী ছিলেন। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর জাকির তাবলিগে চলে যায়। কয়েক মাস আগে এলাকায় ফিরে মাটি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। জাকির প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রি করতেন ১২০০ টাকায়। একই এলাকার আরও ১০-১২ জন প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রি করেন ১৬০০ টাকায়। এ নিয়ে তাদের সাথে জাকিরের বিরোধ দেখা দেয়। কিছুদিন আগে জাকিরের মাটি কাটার ভেকু মেশিন পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর সোমবার দুপুরের দিকে ৮-১০ জন লোক হাসানপুর থেকে জাকিরকে স্থানীয় কোটবাড়িয়া এলাকায় তুলে নিয়ে যায়। এরপর বিকেল ৪টার দিকে পাঁচ ব্যক্তি সিএনজি অটোরিকশাযোগে তার মরদেহ বেগমগঞ্জ উপজেলার হলবান পুল এলাকায় নিয়ে খাল পাড়ে ফেলে পালানোর সময় তাদের মধ্যে দুজনকে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে আটক করে গণপিটুনি দেয়।
নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের অভিযোগ, স্থানীয় ইউসুফ, তুহিন, রাসেল, রাকিব, জসিম শনিবার তার স্বামীর মাটি কাটার ভেকু মেশিন পুড়িয়ে দেয়। আজ জাকিরকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি তিনি পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে অবহিত করেন। স্বামী গত কয়েক বছর থেকে রাজনীতির সাথে যুক্ত নেই উল্লেখ করে তার হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন তিনি।
বেগমগঞ্জ থানার ওসি লিটন দেওয়ান বলেন, ‘বিকেল চারটার দিকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে কিছু লোক খাল পাড়ে জাকিরের মরদেহ ফেলে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন তাদের মধ্যে দুজনকে ধরে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। নিহত জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, ‘জাকির একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছিল। তার বিরুদ্ধে সোনাইমুড়ী থানায় ডাকাতি, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ ১১টি মামলা রয়েছে।’
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে বাবুকে হাসাপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আনোয়ার হোসেনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর