
দুই সপ্তাহের তীব্র দাবদাহের পর কক্সবাজারে একটানা তিন ঘণ্টার ভারী বর্ষণে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জনজীবনে। তবে সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা ও দুর্ভোগ। রোববার (১৮ মে) ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে শহরের ড্রেনগুলো উপচে প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে সৃষ্টি হয়েছে কাদা-পানির থৈ থৈ অবস্থা। হোটেল-মোটেল জোনসহ বিভিন্ন এলাকায় আটকা পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা।
শুধু শহরেই নয়, বৃষ্টির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জেলার অর্থনীতিতেও। উপকূলীয় এলাকায় আবারও বন্ধ হয়ে গেছে লবণ উৎপাদন। বোরো ধান কাটার মৌসুমে কৃষকরাও পড়েছেন বিপাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১১ মিলিমিটার। সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান জানান, আগামী ২-৩ দিন এ ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে।
জেলা প্রশাসনের নিয়মিত উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বৃষ্টির প্রেক্ষিতে শহরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু, জলাবদ্ধতা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের বাইপাস সড়ক, বাজারঘাটা, গোলদীঘিরপাড়, টেকপাড়া, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, বিজিবি ক্যাম্প ও আলীরজাহাল এলাকাগুলোয় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। প্লাস্টিক ও ময়লায় সয়লাব নালা-নর্দমা উপচে পড়ে রাস্তায় কাদা জমেছে।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ জানান, জলাবদ্ধতার পেছনে মূল চারটি কারণ—নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা, পাহাড় কাটা, বাসাবাড়ির আবর্জনা ফেলা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন। তিনি জানান, শহরে নালা-নর্দমা পরিষ্কারে এক মাস ধরে অভিযান চলছে, যা বর্ষার আগেই সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ভরা মৌসুমেও ব্যাহত হচ্ছে লবণ উৎপাদন। চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টির কারণে একাধিকবার মাঠে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। আজকের তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে ফের বন্ধ হলো লবণ মাঠের কার্যক্রম।
বিসিক কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া জানান, একবার বৃষ্টি হলে মাঠ শুকিয়ে পুনরায় লবণ উৎপাদন শুরু করতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ লাখ টন কম।
উল্লেখ্য, দেশের চাহিদা মেটাতে চলতি মৌসুমে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কক্সবাজারের সাতটি উপজেলায় ৫৯ হাজার ৯৯ একর এবং চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় ১০ হাজার ৮৯ একর জমিতে লবণ চাষ চলছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর