
ভোলার ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের দধি সম্প্রতি পেয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি। দেশের জনপ্রিয় এই খাদ্যপণ্যটির শত বছরের ঐতিহ্যকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ৩০ এপ্রিল, যখন সরকার একযোগে ২৪টি পণ্যের জিআই সনদ প্রদান করে।
এই স্বীকৃতির মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে ভোলার খামারি, উদ্যোক্তা ও স্থানীয় অর্থনীতির জন্য। জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে উৎপাদিত ঘন দুধের কাঁচা দধি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও পরিচিত হওয়ার পথে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ‘কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ’ খ্যাত ভোলা জেলায় বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার মহিষ রয়েছে। তবে স্থানীয়দের মতে এই সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি। চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক ঘাসে মহিষ পালন করেন স্থানীয় বাতানিরা, যা দুধ উৎপাদনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।
জেলার সাত উপজেলায় প্রতিদিন প্রায় ১০০ টন মহিষের দুধ দিয়ে তৈরি হচ্ছে দধি। এসব দধি শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
ভোলা শহরের ‘আদর্শ দধি ঘর’-এর মালিক মো. আব্দুল হাই বলেন, “প্রতিদিন প্রায় দুই টন দুধ দিয়ে দধি তৈরি করি। দধির সঙ্গে চিড়া ও মিষ্টি মুড়ি মিশিয়ে খাওয়ার প্রচণ্ড চাহিদা রয়েছে। জিআই স্বীকৃতি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”
দৌলতখান উপজেলার মদনপুরের খামারি মো. জামালউদ্দিন বলেন, “জিআই সনদের পর মহিষের দুধের দাম ও চাহিদা বেড়েছে। খামারিরা এখন আরও উৎসাহ পাচ্ছেন।”
ভোলার গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন জানান, পিকেএসএফ-এর সহায়তায় আধুনিক পদ্ধতিতে চরাঞ্চলে মহিষ পালন ও খামারিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “ভোলার দধি শুধু একটি খাবার নয়, এটি জেলার শত বছরের সংস্কৃতির অংশ। জিআই স্বীকৃতি এ পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে বড় ভূমিকা রাখবে।”
জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, “ভোলার দধি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা গর্বিত। এটি খামারিদের উৎসাহিত করবে এবং ভোলার অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করে তুলবে।”
ভোলার মহিষের দুধের দধি এখন শুধু এক এলাকার ঐতিহ্য নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে জাতীয় গর্ব ও সম্ভাবনার প্রতীক।
আরমান/সাএ
সর্বশেষ খবর