
কক্সবাজারে কোরবানির ঈদ ঘিরে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর বাজার। জেলার ৮টি উপজেলায় এবার বসছে মোট ৯৪টি পশুর হাট, যার মধ্যে ৪৮টি স্থায়ী এবং ৪৬টি অস্থায়ী। হাটগুলোতে ইতোমধ্যেই দেশীয় গরু-মহিষের বিপুল সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় মিয়ানমার থেকে আসা চোরাই পশুর প্রবেশ ও বাজারে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কায় তৎপর হয়েছে প্রশাসন। সর্বসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নজরদারি ব্যবস্থা।
জেলার প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়নে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাজারগুলো ঈদ উপলক্ষে ধীরে ধীরে জমে উঠছে। প্রশাসনিক অনুমোদনের তালিকায় রয়েছে, সদরে ১৪টি, রামুতে ১৩টি, চকরিয়ায় ১৬টি, পেকুয়ায়, ৮টি, উখিয়া, ৮টি, টেকনাফে ৭টি, মহেশখালীতে ৬টি, কুতুবদিয়ায় ৬টি।
তবে বেসরকারি হিসাবে বাজারের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অনেক জায়গায় গ্রামীণ উদ্যোগে গড়ে উঠছে হাট।
এবারের বাজারে দেশীয় খামারিদের প্রস্তুতি লক্ষণীয়। খরুলিয়া, ঈদগাঁও, কলঘর, রুমখাঁ, কাটির রাস্তা, জুমছড়িসহ বিভিন্ন বাজারে দামি দেশি গরু ও মহিষের ভিড়। তবে বিক্রেতারা বলছেন, মাঝারি দামের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি, ফলে এই শ্রেণির পশুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
খরুলিয়া বাজারের ইজারাদার বলেন, “এ বছর চাহিদা অনুযায়ী গরুর সরবরাহ ভালো। তবে সাইজ ও মান অনুযায়ী দামও তুলনামূলক বেশি।”
রামুর গর্জনিয়া বাজার, যা মিয়ানমার থেকে আসা চোরাই গরুর জন্য কুখ্যাত, সেখানে সোমবার হাটে একটিও গরু দেখা যায়নি। প্রশাসনের কড়া নজরদারি ও সম্ভাব্য অভিযান ঠেকাতে ব্যবসায়ীরা পশু আনতেই সাহস করেননি। ফলে প্রকৃত খামারিরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আব্দুল খালেক জানিয়েছেন, প্রতিটি বাজারে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মোতায়েন থাকবে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম। গরুর স্বাস্থ্যের ছাড়পত্র ছাড়া বিক্রি হবে না। জাল নোট সনাক্তকরণে থাকছে স্পেশাল স্ক্যানিং মেশিন, আর ছিনতাই রোধে মোতায়েন থাকবে পুলিশের মোবাইল টিম ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরা।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ জানিয়েছেন, “আমরা পৌর এলাকায় একটি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসানোর জন্য আবেদন করেছি। অনুমতি পেলে উপযুক্ত স্থানে বাজার চালু করব, যেখানে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত থাকবে।”
বিক্রেতারা জানান, ঈদের আগের সপ্তাহেই বাজারে বিক্রির চূড়ান্ত চাপ তৈরি হবে। সদরের ঈদগাঁও বাজার, পিএমখালী, মিঠাছড়ি, রুমখাঁ, কলঘর, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফসহ সর্বত্র তখন জমজমাট হাটের চিত্র দেখা যাবে।
এবারের কোরবানির মৌসুমে কক্সবাজারের বাজারগুলোতে দেশীয় গরুর সরবরাহ আশাব্যঞ্জক। তবে চোরাই গরুর আগমন ঠেকাতে প্রশাসন কঠোর। বাজারে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় নজিরবিহীন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা- সুশৃঙ্খল ও নির্বিঘ্ন একটি কোরবানির পশু হাট মৌসুমের।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন জানান, “সাধারণ মানুষ যেন কোনো হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য প্রতিটি হাটে নজরদারি চালানো হবে। কোনো বিশৃঙ্খলা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর