
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে কক্সবাজার উপকূল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সাগরের রূপ একেবারেই ভয়ংকর। জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেড়ে যাওয়ায় একের পর এক বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে
সৈকতের জিও ব্যাগ ও ঝাউবাগানে।
সকালে সৈকতজুড়ে যেন রীতিমতো সাগরের সঙ্গে লড়াই। জিও ব্যাগের ওপর উঠে ছবি তুলতে যাওয়া অনেকে হঠাৎ আসা বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কায় পড়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ সাহস করে সাগরে নামতে চাইলেও বিশাল ঢেউ দেখে মুহূর্তেই পিছু হটছেন। অনেকে আবার উত্তাল
সমুদ্রের পটভূমিতে ছবি তুলে ফিরে যাচ্ছেন।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক রশিদ আহমেদ জানান, “গত দুই দিন ধরে কক্সবাজারে আছি। তবে আজকের মতো ভয়ংকর সাগর আর দেখিনি। নামতে গেলে ঢেউ হয়তো টেনে নিয়ে
যাবে!”
আরেক পর্যটক মোহাম্মদ এমদাদ বলেন, “সাগরের এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি। ভয়ও লাগছে, তবে দূর থেকে দারুণ লাগছে দেখতে। গোসলের ইচ্ছে ছিল, কিন্তু লাইফ গার্ড
নামতে দেয়নি।”
সৈকতের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় থাকা লাইফ গার্ড মোহাম্মদ শুক্কুর জানান, “জোয়ারের সময় ঢেউ আরও উঁচু হয়। এখন পানির উচ্চতা ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি। এ অবস্থায় কাউকে
সাগরে নামতে দিচ্ছি না। ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিচ কর্মী ও লাইফ গার্ড সবাই মিলে পর্যটকদের সর্তক করছি।”
তবে শুধু পর্যটকরাই নন, বৈরী আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। বিশাল ঢেউয়ের কারণে সৈকতের বিভিন্ন বিনোদন সামগ্রী—জেড স্কী, বিচ
ছাতা (কিটকট)—উপকূলে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পর্যটক না থাকায় বিক্রি-বাট্টাও বন্ধ হয়ে গেছে ফটোগ্রাফার ও বিচ বাইক চালকদের।
জেড স্কী চালক ফরমান জানান, “এমন ঢেউয়ে নামা মানে জীবন নিয়ে খেলা। তাই সব
সরিয়ে রেখেছি। এখন বসে আছি, ব্যবসা বন্ধ।”
কিটকট ব্যবসায়ী রানা বলেন, “লাবণী থেকে শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত শত শত কিটকট উঠিয়ে রেখেছি। এখন শুধু নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছি।”
বেলা ১১টার পর শুরু হয় প্রবল ঝড়ো বৃষ্টি। পর্যটকরা দলে দলে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে থাকেন। কেউ বৃষ্টিতে ভিজে ফিরে যান, কেউ আশপাশের দোকান বা হোটেলে
আশ্রয় নেন। প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে চলে দমকা হাওয়া, যা উড়িয়ে নেয় সৈকতের আবর্জনা।
ঝাঁকুনিতে নড়ে ওঠে গাছপালা, চারপাশ ঢেকে যায় ঘন কালো মেঘে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আজ ও আগামীকাল ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরও এক থেকে দুই দিন হালকা থেকে
মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
সাগরের এমন ভয়ংকর রূপে থমকে গেছে প্রাণচাঞ্চল্য। কক্সবাজার যেন আজ প্রকৃতির রোষে নীরব এক দ্বীপ।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর