
আজ ২ জুন, দেশের খ্যাতনামা প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজি মোহাম্মদ ফজলুর রহিমের প্রয়াণ দিবস। ২০০৪ সালের এই দিনে বার্ধক্যজনিত কারণে গুলশানের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. ফজলুর রহিম। শিক্ষা ও গবেষণায় নিবেদিতপ্রাণ এই ব্যক্তিত্ব আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ফুলব্রাইট বৃত্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোয়ানটিটেটিভ জেনেটিক্সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
কর্মজীবনের শুরুতে ড. রহিম নদিয়া জেলায় সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। দেশভাগের পর তেজগাঁওয়ের ইস্ট বেঙ্গল ভেটেরিনারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। পিএইচডি শেষে ময়মনসিংহের তৎকালীন ভেটেরিনারি কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
ড. ফজলুর রহিম ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমান বাকৃবি) পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৪ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। এরপর তিনি ডীন ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ ও ১৯৭২-৭৩ সালে দুই দফায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ১৯৮১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তান সরকার তাঁকে "তমঘা-ই-কায়েদ-ই-আযম" খেতাব প্রদান করে। তবে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনার প্রতিবাদে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে ড. ফজলুর রহিমের অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেন। তাঁর নেতৃত্বে ময়মনসিংহে ‘সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়, যা শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে উপাচার্য ড. কাজি ফজলুর রহিমসহ অনেক শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।
তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাকৃবির পশুপালন অনুষদের একটি ভবনের নামকরণ করা হয়েছে ‘কাজি ফজলুর রহিম ভবন’। এছাড়া, ১৯৯৯ সালের ১২ মে তাঁর কন্যা মিসেস ফয়জুন নাহার সাদিক ও তৎকালীন উপাচার্যের উপস্থিতিতে ‘কাজি ফজলুর রহিম লাইব্রেরি’ উদ্বোধন করা হয়।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার উদ্যোগে কাজি ফজলুর রহিমের প্রতিকৃতির একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে পশুপালন অনুষদের ডিন কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে।
আজ এই দিনে, জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছে এই গুণী শিক্ষক, বিজ্ঞানী, মুক্তিযোদ্ধা ও মানবদর্শনসম্পন্ন দেশপ্রেমিককে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর