
কক্সবাজার: টানা ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের পর্যটন খাতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সৈকতে পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় হোটেল-মোটেলগুলো প্রায় ফাঁকা এবং ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে পর্যটকের আগমন প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। জুনের শুরুতে টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে অধিকাংশ পর্যটন বুকিং বাতিল হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে ছুটির দিনেও পর্যটকদের তেমন উপস্থিতি নেই। সাগর উত্তাল এবং বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সৈকতের রেস্তোরাঁ ও ফুডস্টলগুলো বন্ধ রয়েছে, আর খোলা থাকলেও বিক্রি নেই বললেই চলে।
কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, অনেকে আগাম বুকিং নিয়ে আশা করলেও এখন হোটেল কক্ষ খালি পড়ে থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সৈকতের পাশের দোকান, ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা, ফুচকা-চটপটির ব্যবসায়ী এবং সামুদ্রিক খাবারের রেস্তোরাঁগুলো ক্রেতার অভাবে বিপাকে পড়েছেন।
সুগন্ধা পয়েন্টের সামুদ্রিক খাবার বিক্রেতা সালাউদ্দিন জানান, গত এক সপ্তাহে তিন দিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে এবং বাকি দিনগুলোতেও তেমন বিক্রি হয়নি।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, তিন দিন ধরে দোকান খুললেও হাজার টাকারও বিক্রি হচ্ছে না, কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হোটেল মোটেল জোনের একাধিক মালিক জানান, তাদের ৭০-৮০ শতাংশ কক্ষ ফাঁকা রয়েছে। লাইট হাউস এলাকার ‘সাগর বিলাস’ এর পরিচালক জিয়াউল হক জিয়া জানান, ঈদের পরে অনেক বুকিং পেলেও জুনের শুরুতে বৃষ্টি ও দুর্যোগে প্রায় সব বাতিল হয়ে গেছে।
স্থানীয় ট্যুর গাইড ও রেন্ট-এ-কার চালকদের অবস্থাও একই। পর্যটক না থাকায় তাদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা ফয়সাল মাহমুদ জানান, ৫০ হাজার টাকা দিয়ে খাবারের স্টল দিয়ে এখন প্রতিদিন লোকসান গুনছেন।
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক হাসান মোহাম্মদ জানান, বৃষ্টির কারণে সৈকতে নামাই যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম থেকে আসা কলেজ শিক্ষার্থী তামান্না আফরোজ জানান, তারা তিন বান্ধবী ঘুরতে এসে হোটেলে বসেই দিন কাটাচ্ছেন।
তবে রাজশাহীর আলীম উদ্দিন নামের একজন পর্যটক জানান, সাগর আর বৃষ্টি মিলিয়ে অন্যরকম অনুভূতি পাচ্ছেন, তবে সাধারণ পর্যটকদের জন্য এখন আসা ঝুঁকিপূর্ণ।
রেন্ট-এ-কার চালক হেলাল উদ্দিন জানান, ঈদের সময় দিনে ৪-৫টি ট্রিপ পেলেও এখন দুদিনে একটিও হয় না।
সৈকতের পাশে খেলনা দোকান চালানো নূরজাহান বেগম জানান, বৃষ্টির কারণে বিক্রি না থাকায় পাঁচজন কর্মচারীর মধ্যে তিনজনকে বিদায় দিতে হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা পর্যটন কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বা স্বল্পমেয়াদী সহায়তা চেয়েছেন। তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় একটি ‘সারভাইভাল প্যাকেজ’ এর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
কক্সবাজারের চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, পর্যটন খাতকে বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসন ও জাতীয় পর্যায়ে সহায়তা জরুরি। তিনি বর্ষা-সহনশীল পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলার কথা বলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা সহনীয় পর্যটন পরিকল্পনা, ইনডোর পর্যটন কেন্দ্র এবং বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরি করা ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর