
বগুড়ায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা আমিরুজ্জামান পিন্টুর বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ সহস্রাধিক নেতাকর্মীর প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি ‘রেইনবো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খুলে শরিয়াহভিত্তিক অধিক মুনাফা দেওয়ার প্রলোভনে এসব টাকা আত্মসাৎ করেন। ভুক্তভোগীরা তার প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ঘেরাও করলেও তাকে খুঁজে পাননি।
অভিযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া শহরের মালগ্রাম মধ্যপাড়া খন্দকারপাড়া ডা. আবু জাফরের ছেলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা আমিরুজ্জামান পিন্টু ফারইস্ট ইসলামী ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করতেন। তিনি এ চাকরি ছেড়ে প্রায় এক যুগ আগে বগুড়া শহরের গালাপট্টিতে রেইনবো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। এছাড়া রেইনবো হোমস, রেইনবো কৃষি উন্নয়ন সংস্থা ও শহরের কলোনি এলাকায় শেরপুর সড়কে রেইনবো হাসপাতাল চালু করেন। পিন্টু বিদেশফেরত রেমিট্যান্স যোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেন। পিন্টু সাবেক শিবিরনেতা হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করে তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক মো. ফজলুর রহমান জানান, পিন্টু একজন প্রতারক। চাকরি থেকে অবসরের পর ২০১৬ সালের প্রথমদিকে তিনি পিন্টুর খপ্পরে পড়েন। শরিয়াহভিত্তিক অধিক মুনাফা লাভের আশায় চার লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ করেন। বিভিন্ন মেয়াদে লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে পিন্টু মুনাফা দিতেন। এতে বিশ্বাস করে ধর্মপ্রাণ মানুষ, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বিনিয়োগ করেন।
ফজলুর রহমান আরও জানান, পিন্টু তার ছাত্র হওয়ায় বিশ্বাস করে তিনি পর্যায়ক্রমে টাকা দিতে থাকেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালে তিনি একবারে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। তার স্ত্রী ও ছেলের কাছ থেকে এবং জমি বিক্রি করে পিন্টুর ‘রেইনবো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ ও রেইনবো হোমস লিমিটেডকে টাকাগুলো দেন। তখন তার বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে তাকে সাত লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখনো তিনি ৮৩ লাখ টাকা পাবেন। ওইসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পিন্টু ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হামিদুল হক তোতা পাঁচ হাজারের বেশি গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর ২০২৪ সাল থেকে টাকা বা মুনাফা কোনোটাই ফেরত দিচ্ছেন না। টাকা ফেরত দিতে চাপ দিলে তারা ১৫ মে তারিখ দেন। পাওনাদাররা পিন্টুর বাড়ি ও রেইনবো হাসপাতালে গেলে তিনি ২২ মে তারিখ দিয়ে তাদের ফেরত দেন। ওইদিন বাড়িতে গেলে ২ জুন টাকা ফেরত দেওয়ার সময় দেন।
ভুক্তভোগীরা ২ জুন বাড়িতে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও পিন্টুকে পাওয়া যায়নি। এরপর তারা শহরের কলোনি এলাকায় রেইনবো হাসপাতালে যান। সেখানেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তোতা মিয়াকে ঘেরাও করলে তিনি কিছু টাকা দিয়ে গা ঢাকা দেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারণার শিকার বিনিয়োগকারীরা জানান, শরিয়াহভিত্তিক মুনাফার আশায় তারা কষ্টার্জিত আয় পিন্টুর রেইনবো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, রেইনবো হোমস, রেইনবো কৃষি উন্নয়ন সংস্থা ও রেইনবো হাসপাতালে বিনিয়োগ করেছেন। এখন টাকা বা মুনাফা কোনোটা না দিয়ে পিন্টু আÍগোপন করেছেন। সর্বস্ব খুইয়ে এখন তারা টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে থানা ও র্যাব কমান্ডারের কাছে গেলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেননি। ভুক্তভোগীরা তাদের টাকা ফেরত পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রয়োজনে তারা আইনের আশ্রয় নেবেন। এসব অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে পিন্টুর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া শহর জামায়াতে ইসলামীর আমির আবিদুর রহমান সেহেল জানান, আমিরুজ্জামান পিন্টুর সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলেন। শিবির থেকে যাওয়ার পর তিনি আর রাজনীতি করেননি। তিনি আরও জানান, তার দলের পক্ষ থেকে বারবার এ ধরনের সমিতি বা এনজিওর সঙ্গে জড়িত না থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারপরও এমন কাজে জড়িত হওয়া দুঃখজনক।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির জানান, ভুক্তভোগীদের কথা শুনে তিনি মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কেউ মামলা করতে আসেননি। মামলা করলে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর