
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) প্রথমবারের মতো সিজিপিএ-এর ভিত্তিতে ছাত্র পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তামজিদ হোছাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হলে, শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং অনেকে একে 'ঠুনকো ও একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ছাত্র পরিষদটি তিনজন উপদেষ্টা (পদাধিকারবলে প্রক্টর, উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হবেন। এছাড়া উপাচার্য কর্তৃক মনোনীত একজন প্রভোস্ট কাউন্সিলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য থাকবেন) এবং শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একজন আহ্বায়ক ও একজন সদস্য সচিবসহ মোট ১৮ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতরের শিক্ষা শাখা কর্তৃক প্রণীত নির্দেশনায় 'স্টুডেন্ট কাউন্সিল আহ্বায়ক কমিটি' গঠনে শিক্ষার্থীদের YCGPA (Yearly Cumulative Grade Point Average)-কে অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতে, শিক্ষার্থীদের মেধাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে YCGPA-এর ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে।
সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে উপদেষ্টা পরিষদ অনুষদ ও ইনস্টিটিউট ভিত্তিক সদস্য নির্বাচন করবেন। অনুষদগুলো হলো: প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ (২ জন), বিজ্ঞান অনুষদ (২ জন), জীব বিজ্ঞান অনুষদ (৪ জন), সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদ (২ জন), ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ (২ জন), শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদ (২ জন), আইন অনুষদ (২ জন), আইআইএস (১ জন) ও আইআইটি (১ জন)।
ছাত্র পরিষদের মেয়াদকাল হবে দুই টার্ম বা এক বছর। নতুন কমিটির কাছে কার্যভার হস্তান্তরের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ববর্তী কমিটি কাজ করবে। একজন শিক্ষার্থী দুইবারের বেশি কাউন্সিলে থাকতে পারবে না। উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের সিলেকশন/আলোচনাক্রমে/ভোটাভুটি অনুযায়ী ঐক্যমতের ভিত্তিতে চতুর্থ বর্ষ/জ্যেষ্ঠতম ব্যাচ থেকে আহ্বায়ক মনোনীত করবেন। পরবর্তী দুই ব্যাচের (২য়/৩য়) সদস্যদের মধ্য থেকে সদস্য-সচিব মনোনীত হবেন। সদস্য-সচিব মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাকালীন জ্যেষ্ঠতা অনুসারে পর্যায়ক্রমে মনোনীত হবেন। তবে আহ্বায়ক ও সদস্য-সচিব একই বিভাগ অথবা ইনস্টিটিউটের হতে পারবেন না।
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী বনি ইয়ামিন বলেন, "নোটিশে ছাত্র পরিষদের কাজ স্পষ্ট করা হয়নি। যদি তারা শুধু শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে কাজ করে, তাহলে CGPA ভিত্তি কিছুটা মানা যায়। তবে CGPA কম এমন শিক্ষার্থী অনেকেই আছে যারা শিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহী, তাদের বিষয়েও চিন্তা করা উচিত। যদি তারা সার্বিকভাবে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সমস্যার প্রতিনিধিত্ব করে, তাহলে শুধু CGPA-এর ভিত্তিতে নির্বাচন করা যায় না।"
সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুধা বড়ুয়া বলেন, "ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা অবস্থায় ছাত্রদের সঙ্গে মতবিনিময় ছাড়াই নবগঠিত ছাত্র পরিষদ গঠন করা হয়েছে, যা প্রশ্নবিদ্ধ। সিজিপিএ-সহ আরও মানদণ্ড ঠিক করে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যেত।"
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আল জুবায়ের বলেন, "ছাত্রপরিষদ গঠনপ্রণালী কেমন হওয়া উচিত, সেই বিষয়ে সাধারণ ছাত্রদের মতামতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে উক্ত বিষয়টি অনুপস্থিত।"
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, এই প্রক্রিয়া ছাত্র সংসদের বিকল্প গড়ে তোলার চেষ্টা। তাদের দাবি, শিক্ষা ও গবেষণাভিত্তিক একটি প্রতিনিধি পরিষদ সিজিপিএ অনুযায়ী হতে পারে, কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ ছাত্র পরিষদ, যা শিক্ষার্থীদের সার্বিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে, সেটির ভিত্তি কখনোই শুধুমাত্র সিজিপিএ হতে পারে না।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, "ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিপরীতে ২০০৮ সালে রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক 'স্টুডেন্ট কাউন্সিল/ছাত্র পরিষদ' গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। আমরা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নিয়েছি। এই পরিষদের কাজ হবে অনুষদ ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও সমস্যা নিয়ে কথা বলা। মনোনয়নের ভিত্তিতে সদস্য পদ দেয়া হবে। তবে পরবর্তীতে 'ছাত্র সংসদ' হলে সেক্ষেত্রে নির্বাচনের ভিত্তিতে হবে।"
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর