
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে ঈদুল আজহা উপলক্ষে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নামের পরিবর্তে তালিকায় সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকসহ প্রায় দুই হাজার স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে পবিত্র ঈদুল আজহার আগে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, এসব নামের বিপরীতে বরাদ্দকৃত ১০ কেজি চালের স্লিপ চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে বিতরণের সময় স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বাধা দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেনামী স্লিপের চাল উত্তোলন করতে পারেননি। ঈদের আগের দিন বিতরণ শেষে গুদামে প্রায় সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল থেকে যায়।
প্রশাসন বলছে, ভিজিএফের তালিকায় অনিয়ম থাকায় পরবর্তীতে তালিকা প্রস্তুত করে চাল বিতরণ করা হবে। তবে এই তালিকা প্রস্তুতিতেও অনিয়মের আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ৮ নম্বর বলদিয়া ইউনিয়নে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫ হাজার ৭৪৫ জন হতদরিদ্র মানুষের জন্য ৫৭ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিজন হতদরিদ্র মানুষ ১০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তালিকা প্রস্তুত করার পর উপজেলা কমিটি তা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়। তবে বলদিয়া ইউনিয়নে হতদরিদ্র মানুষের নাম বাদ দিয়ে প্রায় দুই হাজার স্বচ্ছল ও চাকরিজীবীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত ঈদুল ফিতরের আগে প্রস্তুত করা তালিকায়ও প্রায় দুই হাজার স্বচ্ছল ও চাকরিজীবীর নাম ছিল এবং তাদের নামে বরাদ্দকৃত চাল বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
ঈদুল ফিতরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় স্থানীয় সচেতন মহল ঈদুল আজহার চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তোলে। পরে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নামের সঙ্গে স্লিপপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মিলিয়ে চাল বিতরণ করে প্রশাসন। এতে প্রায় দুই হাজার স্লিপধারীর নাম বেরিয়ে আসে, যাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবিক্রিত সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল ইউনিয়ন পরিষদ গুদামে সিলগালা করে রাখা হয়েছে।
তালিকায় দেখা যায়, ১১৩৮ নম্বর ক্রমিকে নাম রয়েছে বলদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সরকার, ২৯২১ নম্বরে রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী, ২৯৩৯ নম্বরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লুৎফর রহমানের নাম, ২৯৪৯ নম্বরে আইনুল হক এবং ২৫৭ ও ২৫৮ নম্বর ক্রমিকে যথাক্রমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুজ্জামান ও আরমান আলীর নাম রয়েছে। তালিকায় এভাবে প্রায় দুই হাজার স্বচ্ছল মানুষের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিরা জানান, তারা জানেন না কীভাবে তাদের নাম তালিকায় উঠেছে।
শিক্ষক আরমান আলী ও আশরাফুজ্জামান জানান, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং এতে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন।
ইউনিয়নটির স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লুৎফর রহমান জানান, তালিকায় তার নাম দেখে তিনি হতবাক হয়েছেন। কারা তার নাম তালিকাভুক্ত করেছেন, তা তিনি জানেন না। তিনি তদন্ত করে বিচার দাবি করেন।
৬ জুন ঈদুল আজহার আগের দিন হাজারো হতদরিদ্র নারী-পুরুষ চাল নিতে এসে সারাদিন অপেক্ষা করে সন্ধ্যায় খালি হাতে ফিরে যান। তাদের অভিযোগ, তালিকায় নাম না থাকার কারণে তাদের চাল দেওয়া হয়নি। এদের মধ্যে অনেকেই ঈদুল ফিতরে চাল পেলেও এবার পাননি। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, তাদের স্লিপ চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বিক্রি করে দিয়েছেন।
ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, এই তালিকা দিয়ে ঈদুল ফিতরে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এবারও একই তালিকা ব্যবহার করা হয়েছে। ভুলক্রমে কিছু স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। স্লিপ বিক্রির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
চাল বিতরণে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, বিতরণের শেষ দিনে ১৮৪০ জন তালিকাভুক্ত ব্যক্তি চাল নিতে আসেননি। তাদের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল গুদামে সিলগালা করে রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস জানান, তালিকা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে নির্ভুল তালিকা করে বাকি চাল বিতরণ করা হবে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর