
বিগত তিন ‘বিতর্কিত’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সহ অজ্ঞাতপরিচয়ের ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
এছাড়াও ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোট পরিচালনাকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানিয়েছে দলটি।
আজ রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এম নাসিরুদ্দিনের কাছে জমা দিয়েছে। এর আগে, দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান (মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক)-এর নেতৃত্বে একটি প্রতনিধি দল আবেদন নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আসেন।
এ সময় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে মো: মিজানুর রহমান, মো: ইকবাল হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও নাঈম হাসান ছিলেন।
বিএনপির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান জানান, মামলার আবেদনের কপি নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল প্রথমে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এরপর তারা শেরেবাংলা থানায় মামলার আবেদন করবেন।
তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত এই তিন নির্বাচনকে ঘিরে বারবার অভিযোগ করার পরেও তৎকালীন সিইসি ও সংশ্লিষ্টরা কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা আশা করি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে ভাইদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। আমরা বিএনপির মহাসচিবের এ সংক্রান্ত চিঠি জমা দিয়েছি।’
তিনি জানান, যেহেতু নির্বাচন ভবন আগারগাঁও এলাকায়, সেজন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হবে। এদিন সোয়া ১০ টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগপত্র হস্তান্তর করেন প্রতিনিধি দল।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিইসি, ইসি ও সচিবদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনে অন্তবর্তী সরকারের উদ্যোগের মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মামলার পদক্ষেপ এলো।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে যান। সেই সংসদকে ‘বিনা ভোটের সংসদ’ আখ্যা দেয় ভোট বর্জন করা বিএনপি।
কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন এ কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ, সাবেক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: জাবেদ আলী এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ মো: শাহনেওয়াজ।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে। বেশিভাগ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নিশিরাতের নির্বাচন’।
কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের সদস্য ছিলেন সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে শরিক ও বিরোধীদল জাতীয় পার্টির জন্য আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সাথে দলের বিদ্রোহীদের। এ নির্বাচনের নাম হয় ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন এ কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো: আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। সবশেষ গত ১৬ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে সরকার প্রধানের দফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া ‘বিতর্কিত’ তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস।
সর্বশেষ খবর