উপকূলের পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম খোকন নামের এক গণমাধ্যমকর্মী। তিনি জেলেদের মধ্যে সাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শফিকুল ইসলাম খোকন পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে জেলেদের ট্রলারে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে না ফেলে উপকূলে এনে ফেলার জন্য উৎসাহিত করছেন। এ পর্যন্ত তিনি অন্তত ৫০টির বেশি মাছ ধরা ট্রলারের জেলেদের সাগরে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছেন এবং সমুদ্র অর্থনীতি তথা সমুদ্রে মাছসহ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে হাতে-কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন।

শফিকুল ইসলাম খোকন জানান, বাণিজ্যিক জাহাজের পাশাপাশি সমুদ্রে মাছ ধরা ট্রলারগুলোও প্লাস্টিক দূষণের অন্যতম কারণ। জেলেরা প্রতি ট্রিপেই কোনো না কোনোভাবে প্লাস্টিক সাগরে ফেলেন। এতে হুমকির মুখে পড়ছে সমুদ্র এবং এক সময় সামুদ্রিক মাছ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলের পাশাপাশি সমুদ্রও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই জেলেদের সচেতন করে এই দূষণ রোধ করা সম্ভব। ইতোমধ্যে কয়েকটি ট্রলারে প্লাস্টিক রাখার জন্য নির্ধারিত স্থান করে দেওয়া হয়েছে, যাতে জেলেরা সাগরে বর্জ্য না ফেলে সেগুলো উপকূলে নিয়ে আসতে পারেন।

গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করা জেলে আবদুল কাদের, বেলায়েত হোসেন, জাহাঙ্গীর মাঝিসহ কয়েকজন জানান, আগে তারা প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতেন না। তবে খোকনের কাছ থেকে জানার পর তারা সাগরে প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ করেছেন এবং ট্রলারে প্লাস্টিক রাখার জন্য বাক্স ব্যবহার করছেন।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, জেলেরা প্লাস্টিকের কারণে সাগরের ক্ষতির বিষয়ে তেমন সচেতন নন। শফিকুল ইসলাম খোকন তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে ভালো কাজ করছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার কীর্তনীয়া বলেন, সাগরকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে জেলেদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। খোকনের এই উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য এবং এটি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।

উল্লেখ্য, শফিকুল ইসলাম খোকন পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। পাশাপাশি স্থানীয় তরুণদের সংগঠিত করতে পরিবেশ রক্ষায় 'পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন' নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন।