জেলে ও কোস্টগার্ডের মধ্যে বিরোধের জেরে অচল হয়ে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য বন্দর বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য বাজার। কোস্টগার্ডের দায়ের করা মামলায় জেলে ও ট্রলার মালিকসহ আট শতাধিক অজ্ঞাতনামা আসামি হওয়ায় গ্রেফতার এড়াতে বহু জেলে এলাকা ছেড়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, কোস্টগার্ডের সাঁড়াশি অভিযানে জেলেরা মাছ বিক্রি করতে পাথরঘাটা বিএফডিসি বাজারে আসছেন না।

পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকারি মৎস্য বাজারের পাইকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন জানান, সাগরে ট্রলিং ট্রলার বন্ধ থাকার পরে ইলিশের দেখা মিললেও বাজারে মাছ বেচাকেনা নেই। যেখানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ মণ ইলিশ বিক্রি হতো, সেখানে এখন ২০ মণও উঠছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুন দুটি ট্রলিং ট্রলার আটকের জেরে মৎস্যজীবীরা কোস্টগার্ডের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় জেলেরা কোস্টগার্ডের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরদিন কোস্টগার্ড ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও আটশ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। এরপর থেকে কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন আটজনকে গ্রেফতার করেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাথরঘাটার অনেক ট্রলার মালিক তাদের ট্রলার ও জেলেদের নিয়ে পিরোজপুর, মহিপুর, আলিপুর, নিদ্রা, সকিনা, পাড়েরহাটসহ বিভিন্ন মোকামে মাছ বিক্রি করছেন।

বরগুনা জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ দুলাল মিয়া জানান, পাথরঘাটা বিএফডিসিতে মাছ বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। বরফকলগুলো বন্ধ, নিত্যপণ্যের দোকানগুলোতেও বেচাকেনা নেই।

পাথরঘাটা নতুন বাজারের তৈল ব্যবসায়ী ইউসুফ মিয়া জানান, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১০০ ব্যারেল ডিজেল বিক্রি হতো, এখন সেখানে এক ব্যারেলও বিক্রি হয় না।

আছিয়া বরফকলের মালিক কামরুল ইসলাম জানান, পাথরঘাটার ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ট্রলার মালিকদের কাছে তাদের কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

পাথরঘাটা আরদ্দার সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ছগির আলম জানান, জেলে এবং ট্রলার মালিকদের কোটি কোটি টাকা দাদন দেওয়া রয়েছে। জেলেরা অন্য মোকামে মাছ বিক্রি করায় তারা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকারি মৎস্য বাজারের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ শিকদার জানান, কোস্টগার্ড ও জেলেদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধে পাথরঘাটার মানুষ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন।

সালাউদ্দিন/সাএ