
গত চার বছরে দুই শতাধিক বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’। যাদের কোনো নাম-পরিচয় নেই, যাদের জন্য কাঁদারও কেউ নেই, এমন অসহায়দের শেষ ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার কাজটি নীরবে করে যাচ্ছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) শহরের পূর্ব মেড্ডাস্থ তিতাস নদী সংলগ্ন বেওয়ারিশ কবরস্থানে কসবা থেকে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৫০ বছর বয়সী এক অজ্ঞাতনামা মহিলার মরদেহ দাফন করার মাধ্যমে বাতিঘর এই মানবিক কাজের ২০০তম মাইলফলক স্পর্শ করলো।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল কাদের জানান, গত শুক্রবার (২০ জুন) কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দারোগাবাড়ি এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাঁশঝাড় থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ওই মহিলার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় মরদেহটি বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য বাতিঘরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. আজহার উদ্দিন জানান, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেওয়ারিশ লাশ দাফনের কাজ শুরু করেন। এ পর্যন্ত তিনি ২০০টি লাশ দাফন করেছেন। মহামারি করোনার সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন থানা থেকে খবর পেয়ে তারা নিয়মিত লাশ দাফন করে আসছেন।
তিনি আরও বলেন, "আমরা টাকা-পয়সার চেয়ে সাহস ও মানবিকতাকে বেশি গুরুত্ব দেই। প্রতি মাসে গড়ে ৫ থেকে ৭টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করি। আমরা চেষ্টা করি, পরিচয় না থাকা এই মানুষগুলোর যেন মর্যাদার সঙ্গে জানাজা, দোয়া ও কাফনসহ দাফন সম্পন্ন হয়।"
বাতিঘরের সদস্যরা নিজেরা লাশ ধোয়ানো, কাফনের কাপড়, বাঁশ, চাটাই-দড়ি, কবর খোঁড়া ও জানাজার নামাজ পড়ানোসহ সবকিছুই নিঃস্বার্থভাবে করে থাকেন। তাদের কবরস্থানে শায়িত অনেকেই সড়ক দুর্ঘটনা, ট্রেনে কাটা, পানিতে ডুবে, হত্যা বা আত্মহত্যার শিকার। এমনকি অর্ধগলিত বা দ্বিখণ্ডিত লাশ দাফন করতেও তারা পিছপা হন না।
ওসি মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, "বাতিঘর মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই বেওয়ারিশ লাশগুলো দাফন করে আসছে। আমাদের থানায় যখনই কোনো অজ্ঞাত মরদেহ আসে, তখনই বাতিঘরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা অত্যন্ত যত্নসহকারে জানাজা পড়ে মরদেহ দাফন করে। এর আগে কেউ এমন কাজ করেনি।"
বাতিঘরের এই নিঃস্বার্থ কাজ সমাজে নতুন আলো ছড়াচ্ছে। যেখানে সবাই মুখ ফিরিয়ে নেয়, সেখানে বাতিঘর মৃত্যুর পরে একজন অচেনা মানুষকে শেষ সম্মান দেয়। এই মানবিক উদ্যোগ শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয়, গোটা দেশের জন্যই এক অনন্য অনুপ্রেরণা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর