• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৩ মিনিট পূর্বে
মোঃ এস হোসেন আকাশ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৬ জুন, ২০২৫, ০৫:৪২ বিকাল

হাওরের বিশাল জলাশয়ের মধ্যে জেগে আছে দ্বীপের মতো ছোট্ট গ্রাম

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

মধ্য আষাঢ়ের ভরদুপুর। এই মেঘ, এই রোদ। চারদিকে গগন যেন অথৈ জলের ওপর ঢলে পড়ছিল। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছিল জলের সঙ্গে আকাশের কতই না মধুরতা। কিছুক্ষণ পর তাদের রঙ মিলেমিশে একাকার। নিটোল ভঙ্গিতে বয়ে যাচ্ছিল আলতো বাতাস। নৌকায় হাওর পর্যটনে মত্ত ষোলো জোড়া কৌতূহলী চোখও জলের হাওয়া আর গগনের সঙ্গে সন্ধিতে ব্যস্ত। শান্ত জল খানিকটা সময় অশান্ত হলেও নিজের সৌন্দর্য বিলোতে কার্পণ্য করে না মোটেও। জলকাব্য তৃষ্ণা মিটিয়েছে, সঙ্গে ভ্রমণপিপাসুদের ক্ষুধা আরও বাড়িয়েছে বৈকি।

এক দিনে এ পিপাসা যেন বড্ড ঊনই থেকে যায়। গল্পটা অপার জলরাশি আর জলে ভেসে থাকা জনপদের। হাওর-বাঁওড় উজান-ভাটির অঞ্চল কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-নিকলী উপজেলা। ‘শুকনায় পাও, বর্ষায় নাও’ এক সময়ের এই প্রবাদ মিথ্যা করে হাওরের বুক চিরে হয়েছে সৌন্দর্যের মিশেলে বিস্তীর্ণ সড়ক। নিবু নিবু আলোতে থাকা দুর্গম এই হাওর এখন শতভাগ বিদ্যুতে আচ্ছাদিত। চকচকে জলের সঙ্গে মিতালি করে কাটে ওই জনপদের জীবন। কখনও আকাশের মতো নীল, কখনও আয়নার মতো স্বচ্ছ এমন স্নিগ্ধ রঙে রাঙা পানিতে টইটুম্বর হাওর-বাঁওড়।

একই আকাশ তখন আমাদের পায়ের নিচেও; বিশাল হাওরজুড়ে যেন পুরো আকাশটারই প্রতিচ্ছবি। সে সময়, পৃথিবীর সমস্ত জঞ্জাল আর হিসেবের খেরোখাতা বন্ধ করে আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম হাওর আর আকাশের অনন্য মিতালী, চোঁখধাধানো সৌন্দর্য।

দূরে মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়, ঝরনা থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানি, অগণিত পাখির কলতান আর করচ-হিজল বনের অপরূপ সৌন্দর্যের সমাহার দেখা যাবে শুধু হাওরেই। কিছু বছর আগেও এই হাওরে যাওয়া ও থাকা দুটিই ছিল যথেষ্ট দুঃসহ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্য ও চাহিদার কারণে হাওরে যাওয়া ও থাকা দুটিই হয়ে গেছে বেশ আরামদায়ক। হাওরের দিগন্ত বিস্তৃত জলের মধ্যে জেগে আছে দ্বীপের মতো গ্রাম। যেখানে বহু মানুষের বসবাস। ট্রলারের দূর থেকে যে কাউকেই কাছে টানে। হাওরবাসীকে কিছুটা রক্ষা করতে জলের মধ্যে হিজল গাছগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এ বসতবাড়িগুলো যেমন সবার সৌন্দর্যের খোরাক জোগাবে, তেমনই সেখানকার মানুষের যাপিত জীবনের রঙ হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।

জলের বড় ধাক্কা সামাল দিতে চারদিকে বাঁশের শক্ত ফলি গেড়ে বেড়া দিয়েছেন অষ্টগ্রামের সবুর মিয়া। বাড়ির রক্ষাকবচ হিসেবে এই বেড়া কয়েক মাস পরপর পাল্টাতে হয় তাকে। এগুলো যেন সবুর মিয়ার ধৈর্যেরই বাঁধ। তিনি বলেন, ‘আর কিতা কইতাম। আমগোর জীবন ডা তো পানির লগেই বান্দা। পানির মন চাইলে ডুবায়া মারে, আর ভাল্লাগে শান্তিতে ঘুমাইতে দেয়।’

একটু দূরেই জহুর শেখের বসতভিটা। ভিটামাটি পানি ছুঁই ছুঁই করছে। যেন আরেকটা বড় জোয়ার এলেই ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। জহুর জীবনের পাঁচ যুগ কাটিয়েছেন হাওরের বুকে। থই থই জলের মধ্যে কোনোমতে টিনের ছাপড়া ঘরে পরিবার নিয়ে থাকেন। সংসারে চার ছেলেমেয়ে। তিন ছেলে বাবার সঙ্গে নৌকায় মাছ ধরে। মেয়ে মার সঙ্গে খড়কুটোর কাজ করে। ঘরের পাশেই খড়ের বড় পুঞ্জি। আরেকটি ছোট চালের গুঁড়ি। যেখানে তরকারি ফলেছে হরেক। এটি যত্নে রাখেন মা-মেয়ে।

উদরপূর্তির জন্যও হাওর সবার পছন্দের। হাওরকে বলা হয় দেশি মাছের আধার বা ‘মাদার ফিশারিজ’। তাই প্রায় প্রতি বেলাতেই খাবারের ব্যবস্থায় থাকে নানা রকমের মাছের আয়োজন। আর যারা হাঁসের মাংস খেতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য থাকে হাওর এলাকার হাঁসের মাংসের ব্যবস্থা। নৌকার ছাদে বসে আশপাশের সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণের সঙ্গে খাবারের আয়োজন, যা খাবারের স্বাদকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।

প্রতি মৌসুমে যেমন হাওর সাজে ভিন্ন রূপে, ঠিক তেমনি প্রতি বেলাতেও এর সাজ একেক রকম। ভোরবেলা হাওর থাকে সুনসান এবং স্নিগ্ধ, কিছুক্ষণ পর হাওর হয়ে ওঠে পাখির কলকালিতে পূর্ণ। দুপুর ও বিকালে দেখা যায় হাওর ও এর চারপাশের বাসিন্দাদের যাপনচিত্র। আর সূর্য ডোবার সময় সম্পূর্ণ হাওর ঢেকে যায় সোনালি রঙের চাদরে। রাতের ঝকঝকে আকাশে মিটমিট করে তারার মেলা। সৌন্দর্যের এই আমেজে মেতে ওঠেন নৌকার মাঝি নিজেও। তাই সন্ধ্যার পর এই হাওরে প্রায়ই বসে বাউলগানের আসর।

জল টইটম্বুর হাওরে ডিঙি নৌকা হাঁকিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরছে গেরস্থরা। হাঁটুরে লোকজন ফিরছে ইঞ্চিনচালিত ট্রলারে। হাওরের দ্বীপসদৃশ ছোট্ট বাড়ির উঠোনে মাথায় ঘোমটা টেনে দূরে দৃষ্টি নিবদ্ধ কোনো নারী- অপেক্ষায় সন্তান বা স্বামীর। মাথার উপর সুনীল আকাশে লুকোচুরি মেঘ আর রৌদ্রের। হাওরেরই একপাশের জলরাশিতে টুপ করে ডুবে যাচ্ছে রক্তিম সূর্য।

মিঠামইনের বাসিন্দা রুস্তুম আলী কুঁড়েঘরের পাশে ছনের চাল দিয়ে আরেকটি ঘর করেছেন গবাদিপশুর জন্য। ছয় মাস খড় খেয়েই বাঁচে তার তিনটি গরু। ঘরের পাশেই বান্ধা দুটা ডিঙি নৌকা দেখিয়ে রুস্তুম বলেন, ‘এই যে দেকচুইন নাও। এইডাই দিয়া ঘরে খাওন আয়ে। পানি কইম্মা গেলে আমার হাওরে ধান রুই। এই ধানের চাইল দিয়া যায় বাহি ছয় মাস। করুনা মরুনা আমাগোর এফি নাই। পানির মইদ্দে কইত্তে করুনা আইবো। রাত-বিরাইতে বাইত পানিত্তে ধোরা সাপ ফালায়া উঠে। বাপে-পুতে বাইড়ায়া মাইরালাই (অট্টহাসি...)।’ 

অষ্টগ্রামের আলিগড়ের তরুণ সফিকুল ইসলাম। ঢাকায় অনার্সে পড়েন। তিনি বলেন, হাওরে বিদ্যুৎ আসবে আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। আমরা হাওরবাসী সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এখানের তরুণরা এখন স্কুলে যায়। পড়াশোনা করে। কয়েক বছর আগেও সবাই জলে কাজ করত।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা আকাশ মাহমুদ জানান, মাঝি আমাদের এই উচ্ছলতাকে কিছুটা পাগলামো ভাবছেন তা বোঝা গেল সহজেই। তিনিই জানালেন, হাওরের ভেতরেই একটা বাজারে নিয়ে যাবেন। ট্রলার চললো সোজা। ক্রমেই পেরিয়ে গেলাম দূরে দূরে থাকা কল্পনায় দেখা সেসব সবুজাচ্ছাদিত দ্বীপসদৃশ বাড়ি। চারপাশে জলের মধ্যে ছিমছাম গেরস্থ বাড়ি। বাড়ি লাগোয়া সবজি ক্ষেত, শিশুদের খেলার মাঠ। খড়ের স্তূপ, গরুর পাল। আর দশটা গ্রামের বাড়ির মতোই। তবে চারপাশে শুধু পানি আর পানি।

তিনি আরো বলেন, শুকনো মৌসুমে একফোটা জলহীন বিশাল আদিগন্ত সবুজ তৃণভূমি এই বর্ষায় অকূল দরিয়া হয়ে উঠেছে- ভাবতেই কেমন শিহরণ বয়ে যায় মনে। 

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]