• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১১ সেকেন্ড পূর্বে
প্রচ্ছদ / জাতীয় / বিস্তারিত
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ২৬ জুন, ২০২৫, ০৬:০৮ বিকাল

নতুন আতঙ্কে অস্থির দেশ’, ভয়ে আছেন সাবেক আমলাসহ অনেকে

ফাইল ফটো

‘মব জাস্টিস’ এখন নতুন এক আতঙ্কের নাম। সংঘবদ্ধ কিছু মানুষের নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতাকে অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় ‘মব জাস্টিস’ বলা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এই মব জাস্টিসের নামে কাউকে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে। যখন-তখন কারও বাড়িতে ঢুকে লুটপাট করা হচ্ছে। কাউকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। কোথাও আবার কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনিক কাউকে জুতার মালা পরিয়ে কান ধরে উঠবস করানো হচ্ছে। বেড়েছে দলবদ্ধ হয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে কাউকে হত্যা করার ঘটনাও। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। মব জাস্টিসের শিকার হচ্ছেন রাজনীতিবিদ, পুলিশ, শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক থেকে শুরু করে চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সর্বত্র এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

এ অবস্থায় তাৎক্ষণিক এবং দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক পাড়ায়-মহল্লায় টহল বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর বিগত কয়েক মাসে মব জাস্টিসের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে ঘটা এ ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা প্রতিরোধে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ক্রমাগত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের কারণে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম না হলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। এভাবে মব জাস্টিস বেড়ে যাওয়ার পিছনে বিগত সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসন বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। গত দেড় দশকে জনমানসে যে ব্যাপক মাত্রার ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, বর্তমানের ঘটনাগুলো এরই বহিঃপ্রকাশ। 

তাদের আরও অভিমত-তবে বাংলাদেশে এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আগেও দেখা গেছে। তবে সেটা কথিত চোর-ডাকাতকে পিটুনি দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার পুলিশ, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা কর্মকর্তাদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা, মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া, আদালত এলাকায় আসামিদের ওপর হামলা, আবার কোথাও কোথাও পিটিয়ে, কুপিয়ে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও হামলা এবং ভাঙচুর হয়েছে ভাস্কর্য, মাজার, স্থাপনা ও শিল্প-কারখানায়। এ ধরনের ঘটনা ছাত্র-জনতার গোটা গণ-অভ্যুত্থানকেই ব্যর্থ করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

শুরুর দিকের অনেক ঘটনায় ‘কার্যত’ চুপ থাকলেও এখন মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে সরকার বেশ সরব। মব জাস্টিসের ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়াও শুরু করেছে তারা। মবের নামে সরকারকে বিব্রত করার কারও কোনো প্রচেষ্টা আছে কি না তাও এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

সাবেক সিইসি নুরুল হুদার সঙ্গে মবের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘গ্রেপ্তারের সময় সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থি ও ফৌজদারি অপরাধ।’এ ঘটনায় হওয়া মামলায় রাজধানীর উত্তরা থানা পুলিশ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং নানা পর্যায়ে মানুষের যে ক্ষোভ, এগুলোর একটা আউটকাম হচ্ছে এই ধরনের সংঘবদ্ধ ঘটনাগুলো। তবে যত ক্ষোভই থাকুক না কেন, এসব ঘটনা (মব) কোনোভাবেই সমাজের জন্য, সুশাসনের জন্য ইতিবাচক নয়। এসব ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা এটা করে তারা অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। আইনের চোখে এদের পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। সরকার এই ব্যাপারে একেবারে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। আইনি ভিত্তিতে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্ব দেওয়া হবে না।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার সঙ্গে হওয়া ‘মব’-এর ঘটনায় ভয ও আতঙ্কে আছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের অন্যান্য বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের আমলারা। তারা অশঙ্কা করছেন মব প্রশ্রয় দেওয়া হলে তারাও যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক সচিব বলেন, ‘আমরা সরকারের কর্মচারী ছিলাম। সরকারের এমপি-মন্ত্রী যারা ছিলেন তাদের হুকুম পালন করেছি। দীর্ঘদিন চাকরি শেষে যদি মবের শিকার হতে হয় তাহলে মান-সম্মান তো আর কিছুই থাকল না। যারা অন্যায় করেছে, আইনের মাধ্যমে বিচার হবে। আইনের বিচারের আগে এখন মব জাস্টিসের মাধ্যমে বিচার করা হচ্ছে; হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমরা ভয়ে আছি, আতঙ্কে আছি।’

৫ আগস্ট-এর পর আওয়মী লীগের নেতারা বেশিরভাগ আত্মগোপনে চলে গেছেন। কেউ দেশে লুকিয়ে আছেন, কেউ দেশের বাইরে চলে গেছেন। এদিকে সরকারও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যেও মাঝে মধ্যে আওয়ামী নেতাকর্মীদের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার খবর আসে। অনেক জায়গায় মব জাস্টিসের নামে নির্যাতন করে তারপর পুলিশে সোপর্দ করা হচ্ছে। এই ভয়ে এখন আওয়ামী লীগের একেবারে ‘গড়পড়তা’ বা গুরুত্বহীন নেতারাও লুকিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন, এখনও বলছেন। তারা তাদের কর্মীদের সর্তক করেছেন মব না করতে। তারপরও এটি থামানো যাচ্ছে না।

নুরুল হুদার সঙ্গে মবের ঘটনায় দলের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ‘ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন’ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, আমরা মব কালচারে বিশ্বাস করি না, আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য অবিরাম সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আমরা চাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং আদালতের রায় বাস্তবায়ন হবে, বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকবে। সালাহ উদ্দিন বলেন, আমরা চাই, কোনো ব্যক্তি যতবড় অপরাধীই হোন না কেনো তার আইনি এবং সাংবিধানিক অধিকার যেন ভোগ করার অধিকার অক্ষুণ্ন থাকে।

অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, অপরাধী যত বড়ই হোক, ‘মব জাস্টিস’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিচার সমর্থনযোগ্য নয়। গত তিনটি নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার একক নাটকীয় নির্বাচন। এসব নির্বাচনের সময়কার সকল নির্বাচন কমিশনারই ফ্যাসিবাদের অংশ। তবে তারা যত বড় অপরাধীই হোক, বিচার হবে আইনের মাধ্যমেই, মব জাস্টিসের মাধ্যমে নয়। মব জাস্টিস সমর্থনযোগ্য নয়।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, ‘মবোক্রেসির মাধ্যমে লাঞ্ছিত হওয়ার পর বিতর্কিত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার গ্রেপ্তার হয়েছেন। মবোক্রেসি ও লাঞ্ছনার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। সরকার মবের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো— এই মব উৎপাদনের সাথে সরকার জড়িত নয় কি?’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যতদিন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হবে, ততদিন সমাজ থেকে মবোক্রেসি বন্ধ হবে না। মব উৎপাদনের দায় পুরোপুরি সরকারের। সরকারের দুর্বলতার কারণেই বারবার মবের ঘটনা ঘটছে।’

প্রসঙ্গত, গত ২২ জুন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে আটক করা হয়। আটকের আগে কিছু লোক তার বাসায় ঢুকে তাকে নানাভাবে অপদস্থ করেন। ওই সময় হেনস্থাকারীরা কেউ কেউ ফেইসবুকে লাইভও করেন। এমন একটি লাইভে দেখা যায় নূরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিচ্ছেন এক ব্যক্তি।

বাঁধন/সিইচা/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com