
কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্ত এলাকায় নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’র তৎপরতায় স্থানীয় জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত সাত মাসে এই এলাকায় অন্তত ৩৯টি ট্রলারসহ ২০৪ জন জেলেকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কূটনৈতিক ও সীমান্ত পথে যোগাযোগ করে ২৭টি ট্রলার ও ১৮৯ জন জেলেকে ফেরত আনতে সক্ষম হলেও এখনো ১৫ জন জেলে ও ১২টি ট্রলারের কোনো খোঁজ মেলেনি।
এ পরিস্থিতিতে জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছেন, যার কারণে শত শত ট্রলার গত ১১ দিন ধরে ঘাটে নোঙর করে আছে। এতে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন উপকূলীয় এলাকার ১৫টি পরিবার।
টেকনাফ কায়ুকখালীয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমদ জানান, মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর আরাকান আর্মির উৎপাত বেড়েছে। গত ১৩ জুন গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরার পথে নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে টেকনাফের তিনটি মাছ ধরার ট্রলার আটকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় তারা। ট্রলার, মাছ, জ্বালানি ও খাবার লুট করার পর জেলেদের ছেড়ে দিলেও ভয়ে কেউ আর সাগরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।
স্থানীয় জেলেরা জানান, সাগরে যেতে না পারলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে, আর গেলে আরাকান আর্মির হাতে অপহৃত হওয়ার ভয়। এ অবস্থায় এ তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, দক্ষিণপাড়া, ঘোলাপাড়া এবং কায়ুকখালীয়া ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, চার শতাধিক ট্রলার ঘাটে বাঁধা রয়েছে এবং জেলেরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করে কয়েক দফায় অপহৃতদের উদ্ধার করেছেন। তবে নতুন ঘটনাগুলো সম্পর্কে জেলেরা বিজিবিকে অবহিত করেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মান্নান ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম জানান, জেলেরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি সীমান্তে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন জানান, মিয়ানমারের জলসীমায় না ঢুকতে জেলেদের বারবার বলা হয়েছে। কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সচেতন মহল মনে করে, শুধু স্থানীয় উদ্যোগ নয়, এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ, সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং জেলেদের জন্য পুনর্বাসন পরিকল্পনা প্রয়োজন।
সর্বশেষ খবর