
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলায় পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা ও স্থানীয়দের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে রোয়াললিং বম ও লালপেক লিয়ান বমের মতো কয়েকজন সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের শুরুতে এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেলে দুর্নিবার পাড়ার বাসিন্দা রোয়াললিং বম কেএনএফ-এ যোগ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর থেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গভীর জঙ্গল, সীমান্ত এলাকা এবং মিজোরামে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে এবং আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি সম্প্রতি এলাকায় ফিরে আসেন।
একইভাবে রুমা উপজেলার তামলৌ পাড়ার লালপেক লিয়ান বমও সন্ত্রাসী জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। আত্মসমর্পণকারী সদস্যদের নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন থেকে নানা ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
কেএনএফের দুই সদস্য ছাড়াও অস্থির পরিস্থিতির কারণে পালিয়ে থাকা ৮৯ পরিবারের তিন শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু রুমা ও রোয়াংছড়ির বিভিন্ন পাড়ায় ফিরে এসেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই পার্শ্ববর্তী ভারতের মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
দুর্গম পাড়াগুলোতে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। ফিরে আসা লোকজন জরাজীর্ণ ঘরবাড়ি সংস্কার করছেন এবং জুম চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সম্প্রতি ভারত-মায়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন সুংসং পাড়ায় বম সোশ্যাল কাউন্সিল ও নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় এক মতবিনিময় সভা। এতে সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার, বান্দরবানের রিজিয়ন কমান্ডার, বম সোশ্যাল কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজার লম বম জানান, সন্ত্রাসী তৎপরতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের কারণে আতঙ্কিত হয়ে অনেক গ্রামবাসী এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার মিজোরামে চলে গিয়েছিলেন। যারা এলাকায় ছিলেন, তারা জুম চাষ করতে না পারায় খাদ্য ও আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ২০ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানান বম সোশ্যাল কাউন্সিলের নেতারা। রেমাক্রি প্রাংশা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জিরা বম জানান, যারা এখনো এলাকার বাইরে রয়ে গেছেন এবং যারা সশস্ত্র অবস্থায় রয়েছেন, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সন্ত্রাস নির্মূলে অপারেশনের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর ১৬ ইসিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল সৈয়দ আতিকুর করিম জানান, সন্ত্রাস দমনে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। একইসঙ্গে যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছেন, তাদের সহায়তা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ফেসবুকে পেজ খুলে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে আত্মপ্রকাশ করে। বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণা দেয় তারা। গত দু বছরে এই সংগঠনটির সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ৬ সেনা সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন নিহত হয়। গ্রেপ্তার করা হয় দেড়শতাধিক কেএনএফ সদস্যকে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর