
রাজধানীর হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনালে হামলার ঘটনায় যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা মনির হোসেনসহ ১২ জনকে খুঁজছে পুলিশ। তাদের সর্বশেষ অবস্থানের সূত্র ধরে অভিযানে রয়েছে থানা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল। তবে সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই তারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় গ্রেফতারে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে। অভিযানে থাকা একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ বলছে, হামলার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ফুটেজ ও হোটেলে কর্মরতদের তথ্য পর্যালোচনা করে ১২ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এজাহারে মনিরের ৪ সহযোগী রয়েছে। হামলায় চারজনের সরাসরি অংশগ্রহণের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তবে মনির ঘটনাস্থলে ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ এখনও মেলেনি। যদিও হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি মনিরের নেতৃত্বেই ৩০ জন দল বেঁধে হামলা করতে আসেন। অন্যদের পরিচয় জানার চেষ্টয় রয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়াও হামলার শিকার দুই নারীর সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা ওই বারের ড্যান্সার। তাদের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পেয়েছে পুলিশ। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, ভিকটিম ওই দুই নারী যেন থানায় অভিযোগ দেয়।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ার জানান, হামলার সিসিটিভি ফুটেজ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় আসামিরা বিচ্ছিন্নভাবে আত্মগোপনে চলে যায় এবং ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করে। এতে শনাক্ত হওয়া আসামিদের গ্রেফতারেই আমাদের সময় লেগে যাচ্ছে। একাধিক দল অভিযানে আছে। আশাকরি শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনতে পারব।
মঙ্গলবার রাতে হামলার ঘটনার পর বুধবার হোটেল কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করে। এতে যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা নেতা মনির (৪২) ও তার সহযোগী লিটন (৩০), হাসান (৩৫), সামু (৩২) ও জহিরকে (৩০) আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনার ভিডিও সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে মনির হোসেনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে যুবদল।
মামলায় বলা হয়, ৩০ জুন রাত ৮টার দিকে মহাখালীর জাকারিয়া বারে আসেন মনির হোসেন। তিনি সেখানে একটি ভিআইপি কক্ষ চান। কিন্তু সেখানে ভিআইপি কক্ষ খালি না থাকায় সেটি দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কক্ষ না পেয়ে মনির বারের টেবিলে বসে খাবার ও মদ অর্ডার করেন। খাবার শেষে স্থানীয় নেতা পরিচয় দিয়ে বিলে তিনি ছাড় চাইলে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ টাকা কমিয়ে দেয়। তবে যাওয়ার সময় ভিআইপি রুম না দেওয়ায় তার মনক্ষুণ্ন ও ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা তুলে ধরে কর্তৃপক্ষকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এর পরদিন রাত পৌনে ৯টার দিকে ২০-২৫ জন ওই বার ও রেস্তোরাঁয় জোর করে ঢুকে পড়ে। ঢোকার পর মনিরের সহযোগী লিটন বারের একটি গ্লাস হাতে নিয়ে মেঝেতে ছুড়ে মেরে বলে, ‘মনির ভাই তোদের হোটেলে আসছিল, তোরা মনির ভাইকে ভিআইপি কেবিন না দিয়ে অসম্মান করেছিস, আমরা মনির ভাইয়ের লোক, তোরা মনির ভাইকে চিনে রাখবি’। এসব বলে মনিরের লোকজন হোটেলে ভাঙচুর চালায়। তারা হোটেলের অফিস রুম ও ক্যাশ কাউন্টার থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকাসহ আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার মদ ও বিয়ার কৌশলে চুরি করে নিয়ে যায়। তখন বারের কর্মীরা তাদের বাধা দিতে গেলে তাদেরও মারধর করে হামলাকারীরা।
সামাজিকমাধ্যম ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, শাড়ি পরা এক নারী হোটেলটির সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচে নামছেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে এক ব্যক্তি ওই নারীর পথ রোধ করে শরীরে আঘাত করছেন। তার হামলায় ওই নারী মেঝেতে পড়ে যান। ওই সময় তার পেছনে আরেক নারীও নামার চেষ্টা করছিলেন। তাকে পেছন থেকে ধাওয়া করে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। এছাড়াও বারে ভাঙচুর চালাতে দেখা গেছে ফুটেজে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর মহাখালী এলাকার চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেয় মনির হোসেন। মহাখালী কাঁচাবাজারের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে মনিরের ক্যাডার বাহিনী। মহাখালীর আমতলা থেকে গুলশান লেকের ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, খাবার হোটেল ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। চাঁদার দাবিতে এর আগে ২০ জানুয়ারি মহাখালীর জল খাবার রেস্টুরেন্টে মনিরের ক্যাডার বাহিনী তান্ডব চালায়। ওই সময় মনির জল খাবার রেস্টুরেন্টের ক্যাশ ড্রয়ার থেকে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ওই ঘটনায় জল খাবার রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ বনানী থানায় একটি অভিযোগ দিলেও পুলিশ মনিরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর