
বরগুনা জেলার বেতাগীতে স্লুইস গেট নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন, অনাবাদি থাকছে জমি। সেই সঙ্গে যাতায়াতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বেতাগী উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে বেতাগী ইউনিয়নের ছোট ঝোপখালী, ঝোপখালী, ঝিলবুনিয়া এবং মোকামিয়া ইউনিয়নের করুনা ও ছোট মোকামিয়া এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে আউটলেট ও স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন প্রায় ১১ কোটি টাকার ৬টি প্যাকেজের কাজ পেয়েছে চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় নয় মাস আগে বাঁধ দিয়ে বেতাগী সদর ইউনিয়নের গাবুয়া খালের ওপর আউটলেট নির্মাণ কাজ শুরু হলেও তা এখনও শেষ হয়নি। ফলে পানি নিষ্কাশন বন্ধ থাকায় কেওড়াবুনিয়া, বেতাগী ও গাবুয়া গ্রামের প্রায় ৪০০ একর জমিতে আউশ ধানের চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে।
কৃষকরা জানান, খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে আউশ মৌসুমের শুরুতে পানির অভাবে বীজ বপন করা যায়নি। বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জমিগুলো এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, “ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে বর্ষা মৌসুমে কাজ শুরু হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।”
স্থানীয়রা আরও জানান, মাঠ তলিয়ে থাকায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বেড়েছে মশার উপদ্রব, সেই সঙ্গে ডেঙ্গু, চর্মরোগসহ পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রশাসনের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
বেতাগী পৌরসভার কৃষক মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, “আউশ আবাদ করতে না পারায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করছি। বাধ্য হয়ে অন্যের কাজ করে সংসারের খরচ যোগাচ্ছি।”
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, গাবুয়া খালের আওতাধীন কৃষকরা জমিতে চাষাবাদ করতে পারলে প্রায় ৫৫০ মেট্রিক টন ধান পেতেন, যার আর্থিক মূল্য প্রায় এক কোটি ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। আমন মৌসুমেও চাষাবাদ ব্যাহত হলে আরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বেতাগী সদর ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ জানান, দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ না হলে কৃষকরা আমন মৌসুমেও চাষাবাদে পিছিয়ে পড়বেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ জানান, চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে।
কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রাজু আহমেদ জানান, কাজে ব্যবহৃত উপকরণের পরীক্ষার ফলাফল বুয়েট থেকে বিলম্বে আসায় এবং ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে খুব দ্রুত কাজ শেষ করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী বলেন, “কৃষকদের সমস্যার কথা জানতে পেরেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের সাথে একাধিকবার কথা হয়েছে। তারা দ্রুত কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন। গাফিলতি করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর