
নবীগঞ্জ শহরে দফায় দফায় সংঘর্ষের জেরে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি হাসপাতাল ও যানবাহনে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে ট্রাক, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের লোকজন পূর্ব ঘোষণা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় প্রস্তুতিমূলক সভা করে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে উভয় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সংঘর্ষটি সাম্প্রদায়িক রূপ নেয়। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষে আশপাশের কয়েকটি মৎস্যজীবী গ্রাম এবং পূর্ব তিমিরপুর, পশ্চিম তিমিরপুর ও চরগাঁও গ্রামের নারী-পুরুষেরা অংশ নেয়।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষে কয়েক শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। শহরের দুই শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন ইউনাইটেড হাসপাতাল ও মাছ বাজারে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। পশ্চিম বাজারের প্রতিটি মার্কেট ও দোকানেও ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টা ধরে শহরে অরাজকতা চলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি বিশেষ মহল গুজব ছড়িয়ে আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করেছে। কারণ আনমনু গ্রাম মূলত মৎস্যজীবী অধ্যুষিত এবং তিমিরপুর গ্রামে বাঙালিরা বসবাস করে।
এর আগে শনিবার (৫ জুলাই) নবীগঞ্জ উপজেলার ৬ নম্বর কুর্শি ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় আনমনু গ্রামের লোকজন এক গাড়িচালকের ওপর হামলা করে এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করে। শ্রমিকরা জানান, হামলাকারীরা গাড়ির চাবি, কাগজপত্র, দুটি ফোন ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
শহরের ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে আতঙ্ক নেমে এলে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হামলা ও লুটপাট চালায়। গত চার দিনে বাজারের অন্তত ৫০টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাটারিচালিত মিশুক ভাঙচুর করে ব্যাটারি চুরি করা হয়েছে এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। তারা আরও জানান, ২০২৪ সালেও একই ধরনের ঘটনায় আনমনু গ্রামের লোকজন বিভিন্ন দোকান থেকে মালামাল লুট করেছিল, যা পরবর্তীতে সালিসের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী মোঃ শাহজাহান আলী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরফরাজ আহমদ চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হোসেন জীবন প্রমুখ সালিসের উদ্যোগ নিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, ইনাতগঞ্জ থেকে পলাতক আশাহিদের বিভিন্ন অপকর্ম আড়াল করার জন্য এই অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন এবং সংঘর্ষ ও লুটপাটের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর