
ফেনী: ফেনী ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে গত বছরের প্রলয়ংকরী বন্যার এক বছর না যেতেই ফের কৃত্রিম বন্যা ও শহরের জলাবদ্ধতায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছে কয়েকটি নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন।
নাগরিক সংগঠন ফেনী কমিউনিটির মুখপাত্র বুরহান উদ্দিন ফয়সল, ইউনিভার্সিটি এক্স স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ফেনী-উসাফের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম নুরুল আবসার ও সেক্রেটারি ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন রাসেল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এক্স স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ফেনীর পক্ষে অধ্যাপক মোশাররফ হোসাইন, ফেনী সদর এসোসিয়েশন ঢাকার সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন রুমেল, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি এক্স স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ফেনীর সাধারণ সম্পাদক শরিফুর রহমান আদিল, ফেনী জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা এহসানুল মাহবুব জোবায়ের ও সভাপতি শরিফুল ইসলাম শ্রাবণ যুক্ত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে ফেনী শহর কার্যত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ধরনের বৃষ্টি মৌসুমে স্বাভাবিক বিষয় হলেও, নগর ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে শহরবাসীর জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। পথঘাট, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে যাওয়ায় শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের চলাফেরায় চরম অসুবিধা হচ্ছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অফিস কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এই পরিস্থিতি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এবং দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর অবহেলার ফল।
তারা অভিযোগ করেন, এক বছর আগে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় আশেপাশের অন্তত ১১ জেলার মানুষের হাজার কোটি টাকার সম্পদহানি হলেও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এই অঞ্চলের কল্যাণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিগত প্রায় দেড় যুগ ধরে ফেনীবাসীকে বন্যা থেকে স্থায়ী সুরক্ষা দিতে পানি সম্পদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। যার ফলে এবারও ভারত থেকে আসা পানিতে পরশুরাম ও ফুলগাজীর মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বিএসএফ কর্তৃক বল্লামুখা বাঁধ কেটে দেওয়ার এক বছর পরও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বাঁধটি পুনর্নির্মাণ করতে পারেনি। ফলে বর্ষার এই সময়ে ভারতীয় পানিতে ডুবেছে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ। পানি সম্পদ উপদেষ্টাও এর দায় এড়াতে পারেন না বলে নেতৃবৃন্দ মনে করেন।
ফেনী জেলা প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সকল দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের প্রতি নেতৃবৃন্দ জোর দাবি জানিয়ে বলেন:
১. অবিলম্বে বল্লামুখা বাঁধ পুনর্নির্মাণ করে স্থায়ী বন্যা প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে হবে।
২. মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. বাঁধ ও পানি নিষ্কাশন কার্যক্রমের দুর্নীতি তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহরের পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. ড্রেনেজ সিস্টেম সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৬. নগর উন্নয়নের নামে যত্রতত্র নির্মাণকাজ ও বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে।
৭. জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রশাসনিক তদারকি জোরদার করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ ফেনীর সকল নাগরিককে নিয়ম মেনে চলার এবং পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি সংকটময় সময়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন।
একইসাথে, প্রশাসনের প্রতি সময়ের কাজ সময়ে করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, জনমতকে উপেক্ষা করে সমস্যার সমাধান হবে না। ফেনীর মানুষের পাশে অতীতেও তারা ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর