
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে দগ্ধ দুই ভাই-বোনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি স্বপ্নভরা পরিবার শেষ হয়ে গেল। প্রথমে প্রাণ হারায় বড় বোন নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম (১৩), তারপর তার একদিন পর চলে যায় ছোট ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফি (৯)। পরপর আসা মৃত্যু কেড়ে নিল বাবা-মায়ের শত স্বপ্ন আর একটি সুন্দর সংসার।
গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে স্কুল চত্বরে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার সময় দুই ভাই-বোন ছিল মাইলস্টোন স্কুল ক্যাম্পাসেই। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দাউদাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়লে সেখানে থাকা নাজিয়া ও নাফির শরীরের যথাক্রমে ৯০ ও ৯৫ শতাংশ পুড়ে যায়। তাদের দ্রুত ভর্তি করা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
সেই রাতেই (২২ জুলাই) রাত ৩টায় মৃত্যু হয় নাজিয়ার। আর তার ছোট ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফি মারা যায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায়। একদিনের ব্যবধানে দুই সন্তানের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ তাদের পরিবার। নিঝুম ছিল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী, আর নাফি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের চান কাজী বাড়ির সন্তান নাজিয়া ও নাফি। তাদের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আশরাফুল ইসলাম নীরব। মেয়ে ও ছেলেকে উচ্চমানের শিক্ষা দিতে স্ত্রী তাহমিনাকে নিয়ে প্রায় ১৫-১৬ বছর আগে ভোলা থেকে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। বসবাস শুরু করেন উত্তরার কামারপাড়ায়। দুই সন্তানকে ভর্তি করান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। কিন্তু এক মুহূর্তেই সব স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেল।
নিহত শিশুদের চাচা হাসান জানান, "ভালো স্কুলে পড়িয়ে ছেলে-মেয়েকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন ছিল ভাইয়ের। তার সেই স্বপ্ন এখন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে।"
নাজিয়ার মৃত্যু হওয়ার পর তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার কথা থাকলেও ছোট ভাই তখনো লাইফ সাপোর্টে থাকায় লাশ ঢাকাতেই রাখা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে নাজিয়ার জানাজা শেষে উত্তরা কামারপাড়ার একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পরে একই কবরস্থানে দাফন করা হয় ছোট ভাই নাফিকেও—বোনের পাশেই।
ভোলার দক্ষিণ জয়নগর গ্রামে তাদের মৃত্যুর খবরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকাহত পরিবারের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস। দাদা কান্নায় বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন, চাচাতো ভাই-বোনেরা বিলাপ করছে প্রিয় খেলার সাথীদের হারিয়ে। এক মুহূর্তেই নিঃসন্তান হয়ে পড়া নীরব-তাহমিনা দম্পতির জীবনে নেমে এসেছে অপূরণীয় শূন্যতা।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে শোক ও ক্ষোভ। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় থেমে গেল দুটি শিশু প্রাণ, আর চিরদিনের মতো স্তব্ধ হয়ে গেল একটি পরিবারের সকল স্বপ্নের যাত্রা।
সর্বশেষ খবর