গাজীপুরের কালীগঞ্জে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ‘বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা’ থেকে ১৫৫টি অবৈধ ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে।

সোমবার (২৮ জুলাই) বন অধিদপ্তর, পুলিশ ও র‍্যাবের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী দিনব্যাপী এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অভিযানের নেতৃত্ব দেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি জানান, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৪ ও ২৫ নং সেক্টরের প্রায় ১৪৪ একর ভূমিকে এর শালকপিচ সমৃদ্ধ বন ও জীববৈচিত্র্যের কারণে ‘বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর ক্ষমতাবলে এই এলাকাটি সংরক্ষণের জন্য সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ৪৪ জন ব্যক্তি এই সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধভাবে ১৫৫টি ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছিল।

বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিবেশ, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অঙ্গীকারবদ্ধ। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে দেশের বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা জরুরি। বর্তমানে দেশে বৃক্ষাচ্ছাদনের পরিমাণ ২২.৩%, যা এসডিজির নির্ধারিত ২৫% লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। এই ঘাটতি পূরণে সরকার সংরক্ষিত বনে বনায়ন, সামাজিক বনায়নসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এরই ধারাবাহিকতায়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে এবং দেশের মূল্যবান প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষার স্বার্থে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে এক্সকাভেটর ব্যবহার করে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযানে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‍্যাব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল।

ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এই বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকাটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। কোনোভাবেই এটিকে ধ্বংস হতে দেওয়া হবে না। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।"

এই উচ্ছেদের ফলে ১৪৪ একরের মূল্যবান বনভূমি দখলমুক্ত হওয়ায় পরিবেশবিদরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং দেশের অন্যান্য সংরক্ষিত এলাকা থেকেও দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য এ ধরনের সমন্বিত অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন।