
জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে পলাতক থাকা ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আওয়ামী সমর্থিত এই চেয়ারম্যান মো. ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়ার অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে সালথা প্রেসক্লাবের হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলন করেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা। এ সময় পলাতক থাকা ইউপি চেয়ারম্যানের দ্রুত অপসারণ দাবি করে তার নানা দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য তুলে ধরেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভাওয়াল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবু মোল্যা। তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাপর দুইবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পরিষদের বেশিরভাগ বরাদ্দই আত্মসাৎ করেছেন। পরিষদের বেশিরভাগ প্রকল্পের অর্ধেক কাজ করেছেন। বাকি কাজের টাকা তিনি লুটপাট করে খেয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে সাধারণ ইউপি সদস্যদের পাত্তাই দেননি তিনি। যে কারণে উন্নয়নমূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকেছেন সাধারণ ইউপি সদস্যরা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি আর পরিষদে আসেননি। চেয়ারম্যান পরিষদে না আসায় সাধারণ জনগন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামানকে অপসারণ করে প্যানেল চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জনগণের সেবা নিশ্চত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ইউপি সদস্যরা।
জানা গেছে, ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নৌকা প্রতীক নিয়ে ২০১৬ সালে প্রথমবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথমবার চেয়ারম্যান হবার পর দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েন তিনি। যে কারণে ইউনিয়নে জনপ্রিয়তা হারান ফারুকুজ্জামান। তবে জনপ্রিয়তা না থাকলেও ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর আশির্বাদে ২০২১ সালে ফের আবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন ফারুকুজ্জামান।
এরপর আরো বেপোরয়া হয়ে উঠেন তিনি। পরিষদের বরাদ্দকৃত টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও ওয়ানপার্সেনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করতে থাকেন ফারুকুজ্জামান। এমনকি ভিজিডি, গর্ভবতী ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডও টাকা ছাড়া কাউকে করে দেননি তিনি। ভিজিএফের চালও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকুর গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামানের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে। এ ছাড়াও একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয় অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, ভাওয়াল ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুটি মামলার গ্রেপ্তারীপরোয়ানা রয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। তাকে ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর