
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে শিবিরের ‘জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রদর্শনীতে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের ছবি প্রদর্শনে শিবিরের প্রতি নিন্দা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে, এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে।
বুধবার (৬ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামসহ মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির প্রাঙ্গণে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের আত্মদানকে অপমান করল ইসলামি ছাত্র শিবির। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যাকারী পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী আত্মস্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধী ও গণহত্যার দায়ে চিহ্নিত রাজাকারদের ছবি প্রদর্শনীতে স্থান দেওয়ার মাধ্যমে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি কাজ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে ছবিগুলো গতকাল মঙ্গলবার সরিয়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদের মুখে প্রক্টরিয়াল টিম বেশ ধীর গতিতে এই ছবিগুলো অপসারণ করে। নানা মাধ্যমে প্রাপ্ত ভিডিও থেকে দেখা যায় যে, এই ছবি সরানোর আগে একজন সহকারী প্রক্টর উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষের কথা শোনেন এবং ছবি সরানোর নির্দেশ দেন। পরে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরাই ছবিগুলো খুলে ফেলেন বলে বিভিন্ন ভিডিও থেকে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরের ভিডিওতে দেখা যায় যে, কিছু মানুষ দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে ছাত্ররা 'মব' করে ছবি খুলেছে বলে দাবি করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদরত সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মুখোমুখি দাঁড়ায় ইসলামি ছাত্র শিবির। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ বিষয়ে প্রক্টরিয়াল টিম আরও আগে ব্যবস্থা নিলে এবং গাফিলতি না করলে পরিস্থিতি এত দ্রুত উত্তেজনাকর হয়ে উঠত না।
প্রদর্শিত ছবিগুলো প্রসঙ্গে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শন করেছে বলে আমরা মনে করি। এই ছবিগুলো একাত্তরের লাখো শহীদের রক্তের প্রতি এবং আমাদের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান, যা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করব না।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো-
ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা কখনই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে না; এই ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি স্পষ্ট প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করতে হবে; এই ঘটনাটিসহ গত এক বছরে সংঘটিত একাধিক শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত ঘটনায় দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া প্রক্টরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে; ইন্টারনেট ব্যবহার করে নারীদের হয়রানি রোধ করতে যেসব সংগঠন বা গ্রুপ ও গ্রুপের সদস্য এ সকল কাজে সক্রিয়, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে এবং ছড়িয়ে দিতে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে স্মৃতি-চিরন্তনসহ যে-সকল স্থাপনা ও নিদর্শন মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের তালিকা ধারণ করে, সেসবের যথাযথ সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করতে হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর