
‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫’ উপলক্ষে কিশোরগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের শহিদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক (যুগ্মসচিব) ফৌজিয়া খান।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিউজ কভারেজ করার সময় গুরুতর আহত হোন বিডি টোয়েন্টিফোর লাইভ এর কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মোঃ সাখাওয়াত হোসেন আকাশ। পরে তাকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। পরে সেই হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করেন। আঘাতে আকাশের বাম পাশের চাপার হাড় ভেঙ্গে যায় এবং বুকের বাম পাশের দু'টি হাড় ভাঙাসহ শরীলের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক জখম হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একবছর পূর্ণ হয়ে গেলেও মোঃ সাখাওয়াত হোসেন আকাশ এখনোও পুরাপুরি সুস্থ হতে পারে নাই। তার এখনোও চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে জুলাই যোদ্ধাদের বক্তব্যে উঠে আসে বাস্তব চিত্র, প্রত্যাশা ও দায়িত্ববোধের এক স্পষ্ট প্রতিফলন।
জুলাই আহতদের কর্মসংস্থানের দাবি করে কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা বক্তারা বলেন, ‘“আমরা সরকারি চাকরি চাই না, আমরা চাই সম্মানজনক কর্মসংস্থান। যেন পরিবারের মুখে দু’বেলা আহার তুলে দিতে পারি। আমরা কোটার নামে কোনো সুবিধা চাই না। আমরা চাই যেন মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিটি চাকরি হয়—এটাই হোক আমাদের নতুন বাংলাদেশ। আমরা যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে ছিলাম, আজ তারা যেন সমাজের বোঝা না হয়ে যাই। আমাদেরকে যদি সম্মানজনকভাবে বাঁচার পথ দেখানো যায়- তবেই শহিদদের রক্ত সার্থক হবে।”
জুলাই সনদের দাবি ও অধিকার নিয়ে বক্তারা বলেন, “যেভাবে দেশের ইতিহাসে ভাষা শহীদদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনি আমাদেরও ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে সরকারিভাবে একটি সনদ প্রদান করা উচিত। তা যেন পরবর্তী প্রজন্ম জানে, এই ভূমির স্বাধীনতা শুধু কাগজে কলমে আসেনি, এর পেছনে রয়েছে রক্ত-ঘাম ও ত্যাগের ইতিহাস। চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রশাসন- সবখানেই সাধারণ মানুষের সেবা পাওয়ার অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যেখানে সেখানে দালালি ও তদবির না থাকলে সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এটা এখনই বন্ধ করা উচিত।”
জুলাই যোদ্ধারা আরও বলেন, “আমাদের জেগে থাকতে হবে, ঘুমিয়ে পড়লে চলবে না। অন্যায়, দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যারা একসময় অভাবের সঙ্গে লড়তে, আজ তারা ‘জুলাই’কে পুঁজি করে দুর্নীতিতে কোটি টাকার মালিক হয়েছে—এটা সত্যিকারের যোদ্ধাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আহত জুলাই যোদ্ধারা আন্তর্জাতিক মানবিক বিপর্যয়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আজ ফিলিস্তিনে শিশুদের খাদ্য নেই, ওষুধ নেই। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের বাঁচার অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারসহ সব দেশের উচিত নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে কয়েকজন জুলাই যোদ্ধাদের বক্তব্যে আবেগপ্রবণ হয়ে অন্য জুলাই যোদ্ধারা বলেন, “তাদের মুখে যেন আমাদের সবার কথা উঠে এলো। শুধু সম্মান না, আমাদেরও বাঁচার অধিকার আছে। আমরা কোনো দিন প্রাপ্য চাইনি, আজ শুধু বলছি মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে চাই।”
উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ জেলায় ‘জুলাই গণআন্দোলন ২০২৪’-এ অনেক তরুণ-যুবক রাজপথে নেমে আসেন। অনেকেই শহিদ হন, অনেকেই আহত। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব পরিবারকে সম্মান জানাতে এ ধরনের আয়োজনকে উপস্থিত বক্তারা সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন।
পরিশেষে, কিশোরগঞ্জের সকল ‘জুলাই শহিদ’ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে নিহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করে দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সর্বশেষ খবর