
সুনামগঞ্জ সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হওয়ার প্রতিবাদ, নিরাপদ সড়ক, দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে এই অবরোধ করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের শান্তিগঞ্জ পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এর পূর্বে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তারা এই সড়কে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় তারা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে চলাচলরত বাসের ফিটনেস ও লাইসেন্সসহ কাগজপত্র পরীক্ষা করেন এবং ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি আটক করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমাদের বোন মারা গিয়েছে আর সে এখন কবরে। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, ঘাতক বাস চালককে আটক করতে পারেনি, কোনো পদক্ষেপও নিতে পারেনি। প্রশাসন করছেটা কী? প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব।” নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে অনতিবিলম্বে হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ফিটনেসবিহীন পরিবহনকে আটক করে মামলা দেওয়ার দাবি জানালেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এরপর শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই সড়কের বাসগুলোর ফিটনেস ও লাইসেন্স দেখার চেষ্টা করেন। এ সময় ১০টি বাসের মধ্যে ১০টিরই কাগজপত্র ঠিকঠাক পাওয়া যায়নি। তাই এদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাকারিয়া নাইম, রাহাত আহমেদ, তমাল হোসেন, আশরাফ হোসেন প্রমুখ। সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আপন আহমেদ, পূর্বা তালুকদার, হুমায়ুন আহমদ, শান্ত রায়, মো. লিটন, তাহমিদা জাহান রবিন, বুশরা আক্তার, আমিন উদ্দিন, তামিম আহমেদ, তুলি সরকার, সুমাইয়া আক্তার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা জানিয়েছেন, “সবার সঙ্গে কথা বলে আমরা দ্রুত তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব। আমরা নিজেরাও নিরাপদ সড়ক চাই, এ বিষয়ে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি।”
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার দুপুরে জেলার শান্তিগঞ্জে অবস্থিত সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট থেকে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে সিএনজি দিয়ে শহরে ফিরছিলেন দুই শিক্ষার্থীসহ পাঁচজন। ফেরার পথে সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর এলাকায় বাসের সাথে সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলিপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৫০) ও সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শহরের আরপিনগর এলাকা দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে আফসানা খুশী (১৭) নামের দুইজনের মৃত্যু হয়। এ সময় স্থানীয়রা গুরুতর আহত ৩ জনকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠালে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস গ্রামের বিপুল চক্রবর্তীর মেয়ে (১৮) নামের অপর এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। পরে আরও দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সর্বশেষ খবর