
দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুর ব্যুরো প্রধান সাহসী সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করার ঘটনায় সারা দেশের সাংবাদিক সমাজসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা ডাক দেওয়া হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। সাংবাদিক সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ আজ ক্ষোভে ফুঁসছে। এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন মানুষকে নয়, সত্য ও স্বাধীন সাংবাদিকতার মেরুদণ্ডকে আঘাত করেছে।
জানা গেছে, তুহিন দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করছিলেন। গত কয়েক মাস ধরে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী সন্ত্রাসী চক্রের দুর্নীতি, অবৈধ ব্যবসা ও অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। সম্প্রতি তাঁর প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনে স্থানীয় একটি চক্রের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপরাধ কর্মকাণ্ডের তথ্য উঠে আসে। তাঁর সহকর্মীদের দাবি, এই সাহসী প্রতিবেদনগুলোই তুহিনের জীবন কেড়ে নিয়েছে। ঘাতকরা শুধু তাঁকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা সাংবাদিক সমাজকে ভয় দেখানোর এক নৃশংস বার্তা দিয়েছে।
কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত এক জরুরি প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, একজন সাংবাদিকের রক্ত মানে গণতন্ত্রের রক্ত, একজন সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ মানে গোটা জাতির কণ্ঠরোধ। প্রতিবাদ সভায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আমরা তুহিন হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা আছে, তারা যতই ক্ষমতাশালী হোক, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেই হবে।
কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান কুমার বলেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি কথাই বলতে চাই, তারা যদি ভেবে থাকে এভাবে খুন হত্যা করে সাংবাদিকদের কলম আর ক্যামেরা বন্ধ করে রাখবেন, এই ধারণা আপনাদের ভুল। আমরা আশা করব, এই নড়বড়ে প্রশাসন যদি এই সমস্ত ঘটনায় তাদের কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালনা না করে, তাহলে আমরা ভবিষ্যতে কঠোর থেকে কঠোরতম আন্দোলন করব।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, দেশে সাংবাদিক হত্যা মামলার বিচারহীনতা দোষীদের উৎসাহিত করছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, যেন সাংবাদিক তুহিন হত্যায় দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট দাখিল ও বিচার সম্পন্ন হয়।
এদিকে, বাংলাদেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএসইউজে), জাতীয় প্রেসক্লাব, স্থানীয় প্রেসক্লাব, অনলাইন সাংবাদিক ফোরামসহ অসংখ্য সংগঠন একযোগে তুহিন হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জরুরি ভিত্তিতে দোষীদের বিচার দাবি করেছে।
উল্লেখ্য, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮)। গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে মহানগরীর ব্যস্ততম মসজিদ মার্কেটের সামনে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। পরিবার নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস করতেন।
এখন পর্যন্ত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীসহ মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাতে গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে আটক করা হয়। তারা হলেন- ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান, তাঁর স্ত্রী গোলাপী বেগম, স্বাধীন, আল আমিন ও সুমন। ফয়সালসহ তিনজনকে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকা থেকে, আল আমিনকে রাজধানীর উত্তরার তুরাগ এলাকা থেকে এবং স্বাধীনকে হোতাপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও আজ শনিবার মামলার অন্য দুই আসামিকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পাবনার পাচবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ও ভাড়াটিয়া মো. ফয়সাল হাসান (২৩) এবং কুমিল্লার হোমনা থানার বাসিন্দা মো. শাহ জালালকে (৩২) ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানা থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর