
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে টনসিল অপারেশনের পর ৯ বছর বয়সী তাসরিফা নামের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গত ২৬ জুলাই শিশুটির মৃত্যুর পরদিন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠন করেছিল, যার সময়সীমা ছিল সাত কার্যদিবস। গত ১১ আগস্ট তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ঘটনার সময় রোগীর আত্মীয়-স্বজন রোগীর রুমে ছিলেন, রোগী খারাপ হয়েছে তা রোগীর আত্মীয়-স্বজন যথাসময়ে ডাক্তার বা নার্সকে জানাননি। এখানে উল্লেখ্য যে, রোগীর আত্মীয়-স্বজনের কোনো সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হয়নি।"
তাসরিফার বাবা পারভেজ আহমেদ মুঠোফোনে জানান, তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না এবং কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তিনি বলেন, থানা থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু লাশ কাটাছেঁড়া হবে বলে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হননি। এছাড়া, তিনি দরিদ্র হওয়ায় মেয়ের অপারেশনের জন্য ধার করে টাকা এনেছিলেন এবং মেয়ের মৃত্যুর বিচার চাইতে গেলে যে অর্থ খরচ হবে, তাও তাঁর নেই।
তদন্তে উঠে আসা প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত করা হলে পারভেজ আহমেদ বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাঁর দাবি, অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পর তাঁর মেয়ের একবারের জন্যও জ্ঞান ফেরেনি। তাঁরা নার্স ডাকলে তাঁরা বলেছিলেন, কোনো সমস্যা নেই, স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং অপারেশনের পর এমনটা হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ আলী (অ্যানেস্থেশিয়া) জানান, শিশুটির পরিবারের মোবাইল নম্বর না থাকা এবং তাঁদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পাওয়ায় তাঁদের কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শিশুটির অপারেশনকারী ডা. এম এম বিল্লাহ দাবি করেছিলেন, অপারেশন সঠিকভাবে হয়েছে এবং এটি অ্যানেস্থেশিয়াজনিত কোনো বিষয় হতে পারে। অ্যানেস্থেশিয়া করা ডা. সাইফ আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, অ্যানেস্থেশিয়াজনিত কোনো জটিলতা হলে অপারেশন শেষে শিশুটির জ্ঞান ফিরত না। তিনি নিজে এবং শিশুটির পরিবারের লোকজন অপারেশন শেষে তার সঙ্গে কথা বলেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম জানান, তাঁদের পক্ষ থেকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হবে। এছাড়া, তদন্ত প্রতিবেদন জেলা সিভিল সার্জন বরাবর পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, তাসরিফা টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের পাচুটিয়া গ্রামের পারভেজ আহমেদ-পলি বেগম দম্পতির বড় সন্তান ছিল। সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। গত ২৫ জুলাই শিশুটির টনসিল অপারেশনের জন্য মির্জাপুর পৌর শহরের মির্জাপুর মডার্ন হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারে ভর্তি ও অপারেশন করানো হয়। অপারেশন শেষে কয়েক ঘণ্টা পর শিশুটির মৃত্যু হয়।
সর্বশেষ খবর