• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩০ সেকেন্ড পূর্বে
মোঃ এস হোসেন আকাশ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ১০:২২ রাত

কিশোরগঞ্জে পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকের ভিড়

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

রিমঝিম বর্ষা আর নিলীমার শরতের আলিঙ্গনে গ্রাম বাঙলার বিল-ঝিলে পদ্ম ফুল ফোটার সৌন্দর্য যেন এক প্রতিযোগিতার হাতছানি। কালের বিবর্তনে পালাক্রমে বিলুপ্তির পথে পদ্মবিলের পদ্মফুল। *সৌন্দর্যের কারণে পদ্মফুলকে বলা হয় ‘জলজ ফুলের রানি’।*

চোখ জুড়ানো সবুজ দিগন্ত বিল। সেখানে গাঢ় সবুজ পাতার মাঝে হালকা গোলাপি রঙের পদ্মফুলের উঁকি। কুঁড়িগুলো মাথা তুলেছে নতুন করে ফোটার আশায়। সবুজ পাতা আর গোলাপি পদ্মের মিলনমেলায় মনের আনন্দে নির্ভয়ে বিচরণ করছে পানকৌড়ি আর ডাহুক। ফুটন্ত পদ্মের মাথায় খেলা করছে প্রজাপতি আর ভ্রমরের দল। প্রকৃতির এমন প্রেমের আলিঙ্গনের নয়নাভিরাম অপরূপ দৃশ্যের দেখা মিলেছে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দড়িজাহাঙ্গীরপুর গ্রামের কাইনহা বিলে। এখন অবশ্য সবার কাছে এটি পদ্মবিল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

পদ্মবিল দেখতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নেমেছে। পদ্মবিল হয়ে ওঠেছে হাওর পর্যটনের বাড়তি এক মনোরম আকর্ষণ। *পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে জেলার পাশাপাশি রাজধানী থেকেও ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসছেন।*যাতায়াতব্যবস্থা অত ভালো না হওয়ার পরও পদ্ম ফুলের সৌন্দর্যে ছুটে যান দর্শনার্থীরা।

হালকা গোলাপি রঙের পদ্মফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য যেমন মানুষের মনকে আকর্ষণ করে তেমনি খাদ্য ও ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ এ ফুল অনেক জনপ্রিয়। পদ্মফুল অনেকের কাছে আবার বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে গণ্য।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা সদরের অদূরে ছায়া সুনিবিড় ছবির মতো গ্রাম দড়ি জাহাঙ্গীরপুর। এ গ্রাম সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কাইনহা বিলের অবস্থান। বর্ষা ও শরৎকালে এ বিলের বুকজুড়ে দেখা দেয় পদ্মফুলের সমারোহ। বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে। বর্ষা মৌসুমে এ বিলের চারদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গোলাপি রঙের পদ্ম। সঙ্গে রয়েছে সাদা পদ্ম। চোখ যত দূর যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম।

সারি সারি ডিঙি নৌকা নিয়ে এ বিল পাড়ে অপেক্ষায় থাকেন মাঝিরা। এক শ্রেণির শিশু-কিশোররাই ডিঙি নৌকা নিয়ে পারাপার এবং বিল ঘুরে দেখানোর কাজ করে বাড়তি উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছেন।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা য়ায়, বিলের চারপাশে সবুজের সমাহার আর ফুটে থাকা অজস্র পদ্মফুল শোভা ছড়াচ্ছে দর্শনার্থীদের মাঝে। প্রতিদিন বিলে এসে ভিড় করছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা প্রকৃতিপ্রেমীরা। ডিঙি নৌকায় ভেসে জলের ছন্দের তালে তালে পদ্মফুল স্পর্শ করছেন। মন ভোলানো দৃশ্য দেখলে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। নয়নাভিরাম দৃশ্য ধরে রাখতে তুলছেন ছবি আর ভিডিও।

বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ডিঙি নৌকায় উঠে পদ্ম ফুলের আভায় নিজেদের রাঙিয়ে নিতে ঘুরে বেড়ানোর মজাই যেনো আলাদা। কখনও গুনগুন গান করে কিংবা কবিতা আবৃত্তি করে ক্ষণিকের জন্য নিজেদের আড়াল করে দেয়া হয় মনোমুগ্ধকর পরিবেশের চাদরে।

পদ্মফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শক ওমর ফারুক রাসেল বলেন, কাইনহা বিলের পদ্মফুল এবং পদ্মপাতা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। বিলের বর্তমান দৃশ্যটি মানুষের মনে দাগ কাটার মতো। পদ্মফুল ও তার পাতা স্পর্শ করলে মনে হয় যেন সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে প্রবেশ করেছি। বিলের পদ্মফুলগুলো আশপাশের পরিবেশটাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সাদা-লাল রঙের পদ্মফুলের মাঝে সবুজ রঙের পদ্মপাতাগুলো পরিবেশটাকে অন্য রকম করে তুলেছে।

জেলার করিমগঞ্জের নিয়ামতপুর হাজীবাড়ি এলাকা থেকে পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা মো. উবায়েদ উল্লাহ নামের একজন বলেন, ‘আমি এই বিলে ফুটে থাকা পদ্ম ফুল দেখতে এসেছি। খুবই ভালো লাগছে। তবে ভালো লাগার পাশাপাশি একটু খারাপও লাগছে। অনেক দর্শনার্থী বিলে নেমে ফুল তুলে আনছেন। যদি পদ্ম ফুল ফোটার সময় বিল সংরক্ষণ করা যেত, তাহলে দর্শনার্থীরা ফুলের সৌন্দর্য আরও বেশি উপভোগ করতে পারতেন।’

মো. আলমগীর হোসেন নামের একজন বলেন, তিনি একটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সংগঠনের বেশ কয়েকজন মিলে পদ্মবিলে বেড়াতে এসেছেন। একসঙ্গে শত শত পদ্ম দেখে তাঁদের ভালো লেগেছে।

ছেলে নিয়ে বিলে ঘুরতে এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, পদ্মফুলের সৌন্দর্য দেখতে ময়মনসিংহ শহর থেকে এখানে এসেছি। চোখ যেদিকে যায় সেদিকেই শুধু পদ্ম আর পদ্ম। সত্যিই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, তাড়াইলের দড়ি জাহাঙ্গীরপুর কাইনহার বিলকে দু-তিন বছর ধরে পদ্মবিল বলে ডাকছেন স্থানীয় লোকজন। দূর থেকে মনে হয় যেন ফুলের বিছানা পেতে রাখা আছে। প্রতিদিনই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন দর্শনার্থীরা। বর্ষাকালে এই বিলের অধিকাংশ জমিতে প্রাকৃতিকভাবে পদ্ম ফুল জন্মে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গোলাপি রঙের পদ্ম ফুল দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। তবে খারাপ লাগে, লোকজন যখন পদ্ম ফুল ছিঁড়ে নষ্ট করেন।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার মূহুর্তে পদ্মবিল ঘুরে অনেক পর্যটকরা জানান, এখানে পদ্মবিলের দৃশ্য যে এতোটাই মনোমুগ্ধকর তা আগে জানতাম না। ফেসবুকে দেখে ঠিকানা সংগ্রহ করে দেখতে এসেছি। পদ্মবিলটির সৌন্দর্য অনেক ভাল লেগেছে। আশা করি এখানে পর্যটকরা আসলে প্রশান্তি পাবে।

স্থানীয়রা জানান, এই বিলটিতে বর্ষাকালে অসংখ্য পদ্মফুল ফোটে। পদ্মফুল দেখার জন্য অনেক মানুষের সমাগম হয়। নৌকা দিয়ে বিলটি ঘুরে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক দর্শনার্থী মনের আনন্দে কিংবা ছবি তোলার জন্য ফুল ছিঁড়ছেন। অনেকে আবার ফুল ছিঁড়ে বাসায় নিয়ে প্রিয়জনকে উপহার দিচ্ছেন। এতে বিলটিতে পদ্মফুলের সংখ্যা দিনদিন কমে আসছে এবং বিলের সৌন্দর্যও বিনষ্ট হচ্ছে।

সাধারণত পুরোনো গাছের কন্দ ও বীজের সাহায্যে পদ্মের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। এভাবে যদি ফুল ছেঁড়া অব্যাহত থাকে, তাহলে পদ্মের বংশবিস্তার কমে যাবে এবং বিলটির অপরূপ সৌন্দর্য হুমকির মুখে পড়বে। এ অবস্থায় বিলটি সংরক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

করিমগঞ্জ উপজেলা গুজাদিয়া থেকে ঘুরতে আসা রাজন মিয়া বলেন, পদ্মফুল দেখলেই ধরতে ইচ্ছা করে, ছুঁতে ইচ্ছা করে। বিলে যে পদ্মফুল পাওয়া যায় এটির প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারণ। আমি সবাইকে অনুরোধ করবÑ যারা দর্শনার্থী যাবেন দয়া করে এই ফুল ছিঁড়বেন না, নষ্ট করবেন না। আমরা যদি প্রকৃতিকে ভালোবাসি। প্রকৃতির প্রেমে যদি নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই তাহলে এই প্রাকৃতিক সম্পদ আমরা নষ্ট করব না।

ঘুরতে আসা তরুণী জেবিন আক্তার জানান, যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়েও সুন্দর জায়গাটা। আসলে এর সৌন্দর্য বলে বোঝানো সম্ভব না। অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করে। মন ভালো হতে বাধ্য আপনার।

বিলপাড়ে রয়েছে কয়েকটি ডিঙি নৌকা। এতে চড়ে বিলের মাঝে যাওয়া যায়। ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় আধাঘণ্টা ঘুরে বেড়ানো যায়। তবে নৌকায় দু-তিনজনের বেশি উঠতে পারেন না। স্থানীয় অনেকেই নৌকা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন।

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী করিম উল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশ কে বলেন, পদ্ম একটি জলজ উদ্ভিদ। ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণত তিন ধরনের পদ্মফুল দেখতে পাই-লাল পদ্ম, শ্বেত পদ্ম ও নীল পদ্ম। নীল পদ্ম যদিও দেখা যায় না বললেই চলে। সাধারণত নীল পদ্ম আমরা গল্প উপন্যাসে পেয়ে থাকি। একটা সময় আমাদের দেশে অনেক পদ্ম দেখা যেত। কিন্তু বর্তমান সময় বিল, জলাশয় ভরাট করে ফেলার কারণে পদ্মফুল বিলুপ্তির পথে। পদ্মফুল আমাদের জন্য অনেকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, ঔষধিগুণসহ নানাভাবে গুরুত্ব বহন করে।

তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ পপি খাতুন জানান, পদ্মবিলে শত শত পদ্মফুল ফুটতে দেখা যাচ্ছে। যেহেতু সম্প্রতি ফুল ফুটতে শুরু করেছে, সেহেতু এখন পর্যন্ত পদ্মফুল সংরক্ষণের জন্য কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় কি না সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]