
হাটবাড়িয়া জমিদারবাড়ি ডিসি পার্ক এলাকায় সরকারি রাস্তার কাজে ভূমিদস্যুদের বাধা দেওয়া এবং ফেসবুক লাইভে মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে হাটবাড়িয়া এলাকাবাসীর আয়োজনে হাটবাড়িয়া জমিদারবাড়ি ডিসি পার্ক রোডে এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়। হাটবাড়িয়া ডিসি পার্কের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে হাটবাড়িয়া তিন রাস্তার মোড়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় হাটবাড়িয়া জমিদারবাড়ির পূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিল বিশ্বাস, কমল ঘোষ, স্থানীয় বিএনপি নেতা বিল্লাল হোসেনসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, "নড়াইল হাটবাড়িয়া জমিদার এলাকায় ডিসি পার্কে যাওয়ার রাস্তাটি সরকারি ম্যাপে ২৬ ফুট চওড়া। বর্তমানে রাস্তাটি ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুটে বাড়ানো এবং ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় স্থানীয় ভূমিদস্যু গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস ও শিখা রানি কুণ্ডুর পরিবার কাজে বাধা দেয়। পরে ভূমিদস্যু গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে তাঁদের ওপর হামলার মিথ্যা অভিযোগ করে ফেসবুকে লাইভ করে এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টা করছেন। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এখানে সংখ্যালঘুর উপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।"
ভুক্তভোগী হাটবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস অভিযোগ করেন, "রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজে আমাদের কিছু জায়গা ওই সড়কের মধ্যে চলে গিয়েছে। জনকল্যাণে সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু শুক্রবার সকালে স্থানীয় বিএনপি নেতা দেলোয়ারের নেতৃত্বে কিছু লোকজন আমাদের জমির বেড়া ভাঙচুর করে। এর ভিডিও করতে গেলে স্থানীয়রা আমার ছেলের উপর হামলা চালায়।"
নড়াইল পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, "হাটবাড়িয়া ডিসি পার্কের রাস্তা ম্যাপে ২৬ ফুট জায়গা থাকলেও স্থানীয় গোপাল বিশ্বাস সরকারি জায়গা দখল করে রেখেছে। এ বিষয়টি ফয়সালা করার জন্য শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে এনডিসি মহোদয় আমাদের স্থানীয় মানুষদের ডিসি পার্কে ডাকেন। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা ওই শিক্ষকের বাড়ির সামনে দিয়ে ডিসি পার্কে যাচ্ছিলাম। এ সময় ওই শিক্ষকের ছেলে ফেসবুকে লাইভ করে অহেতুক তাঁদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে—এমন কথা বলতে থাকে। আমরা এতে বাধা দিয়ে তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে পরে ফেরত দেওয়া হয়। তাঁদের ওপর আক্রমণ বা কাউকে মারধর করা হয়নি। তাঁদের করা অভিযোগ মিথ্যা।"
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত শাখা) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, "জনস্বার্থে পার্কে ঢোকার রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের জন্য আমরা ওই শিক্ষককে একটু জমি ছাড়তে বলেছিলাম, কিন্তু তিনি রাজি হননি। শুক্রবার আমরা রাস্তার জায়গাটি মাপ করতে গিয়েছিলাম। এসময় এলাকাবাসীও সেখানে আসে। তাঁরা জানায়, ‘রাস্তার পাশে আরও সরকারি জায়গা আছে।’ পরে আমরা মাপার কাজ শুরু করলে ওই শিক্ষকের ছেলে এসে লাইভ অথবা ভিডিও করতে শুরু করেন। এতে গ্রামবাসী বাধা দেন। একপর্যায়ে রাস্তার ওপর দু’পক্ষ উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। যেহেতু আমরা রাস্তার মাপের জন্য গিয়েছিলাম, আমাদের সঙ্গে কোনো ফোর্স ছিল না। আমি বারবার দু’পক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করেছি।"
তিনি আরও বলেন, "ওই শিক্ষক পরিবার নিষেধ করায় ওই জমিতে একটা খুঁটিও পোঁতা হয়নি। অথচ ছেলেটি লাইভে গিয়ে তাঁদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, তাঁদের ঘরবাড়ি দখলের মিথ্যা অভিযোগ তোলে। তাঁর এই কাজের জন্যই এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়। পরে আমি ছেলেটিকে ডেকেছিলাম মীমাংসার জন্য। কিন্তু উনি লাইভ চালিয়ে যেতে থাকেন। এর ওইসব কথা বলতে থাকেন। এতে এলাকার লোকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা চলতেই থাকে। পরে পুলিশে খবর দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। আর বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় রাস্তার জায়গা মাপার কাজও অসমাপ্ত করে চলে আসতে হয়।"
এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজেদুল ইসলাম জানান, "শুক্রবার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।"
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর