
৭০ ঘণ্টার দুঃস্বপ্ন, অসহায় অপেক্ষা আর অশ্রুভেজা প্রার্থনার পর অবশেষে বাবা- মায়ের কোলে ফিরেছে সাড়ে তিন বছরের জুঁই মনি। কক্সবাজারের রামুর ঈদগড় ইউনিয়নের নয়াপাড়া থেকে অপহৃত এই শিশুকে ফেরত পেতে দিতে হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ।
শিশুটি কুমিল্লার কাঞ্চননগরের মো. জুয়েলের মেয়ে। পরিবার জানান, কয়েক দিন আগে সে ঈদগড়ের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়ায় ফুফির বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। গত ১৩ আগস্ট রাতে ফুফুর বাড়ি থেকে জুঁইকে তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। রাত ১১টার দিকে বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে অস্ত্রের মুখে শিশুটিকে অপহরণ করা হয়। প্রথমে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।
জুঁইয়ের ফুফা, ড্রাইভার কালু জানান, গত দুই দিন ধরে দরকষাকষির পর সন্ত্রাসীরা মুক্তিপণ হিসেবে একটি মোটরসাইকেল ও ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে তারা টাকা ও মোটরসাইকেল পার্বত্য এলাকার মসলা পাড়ায় পৌঁছে দিতে বলে। কালু একজন লোককে সেখানে পাঠান, এবং সে লোকটি টাকা ও মোটরসাইকেল সন্ত্রাসীদের হাতে দেওয়ার পর জুঁইকে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
অপহরণের পর প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কে কাটিয়েছে পরিবার এমনটাই জানিয়ে তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ মেলেনি। শুধু অভিযোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু উদ্ধার তৎপরতার কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
ঈদগড়ের বাসিন্দারা বলছেন, এলাকায় অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির ঘটনা নতুন নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্থায়ী উপস্থিতি না থাকায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ‘অপহরণের পরপরই যদি প্রশাসন নড়েচড়ে বসত, হয়তো মুক্তিপণ দিতে হতো না,’ বলেন স্থানীয় এক ব্যক্তি।
এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ঈদগড় ও আশপাশের অঞ্চলে অপহরণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়মিত ঘটলেও প্রশাসন সেখানে স্থায়ী ও দৃশ্যমান উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি। এ কারণে অপরাধীরা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মানুষ অসহায় হয়ে মুক্তিপণ দিয়ে সন্তানকে ফেরাতে বাধ্য হচ্ছে- যা প্রশাসনের ব্যর্থতার বেদনাদায়ক উদাহরণ।
তাদের মতে, ঈদগড় এখন আতঙ্কের আরেক নাম। একসময় শান্ত-নিরিবিলি গ্রাম হলেও সম্প্রতি এই এলাকাটি সন্ত্রাসী ও অপহরণকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে রাত তো দূরের কথা, দিনের বেলাতেও মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে সাহস পান না। ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ কৃষক- কেউই নিরাপদ নন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্থায়ী টহল ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবেই সন্ত্রাসীরা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ফলে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়েই চলছে। গ্রামীণ জনপদে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে; শিশুরা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে, আর অভিভাবকেরা আতঙ্কে প্রতিদিন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় এলাকাবাসী দ্রুত শক্ত পদক্ষেপ ও স্থায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন।
এ বিষয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান বলেন, আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। অপহৃত শিশু জুঁইকে উদ্ধারে আমার পক্ষ থেকে সহযোগিতা ছিল। প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ সঠিক নয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর