
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমানের কক্ষে হঠাৎ এসে তালা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ইউনিয়নের বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। রোববার দুপুর তিনটার দিকে ইউনিয়ন কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যার দিকে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাইরুল ইসলামের হস্তক্ষেপে সেই তালা খোলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে চেয়ারম্যান কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। এসময় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ডা. আহম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান ও জেলা তাঁতীদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাবুল এর নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন এসে চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দিয়ে দেয়। এতে করে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, কারো নামে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটির ব্যবস্থা নিতে আইনপ্রশাসন আছে। এভাবে মব সৃষ্টি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে কোনো কিছু করাটা কাম্য নয়। এভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ করে স্থানীয়রা বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে এক বর্ধিত সভায় সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ বলেন, "৭ দিনের মধ্যে যদি চেয়ারম্যান ফয়জুর নিজেই চেয়ার ও এলাকা ছেড়ে না যান তাহলে যুবদলকে নির্দেশ দেওয়া হলো ওই পরিষদে ঢুকলেই ঘেড়াও করে তাকে ধরে রাখবেন, পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে। আমরা আর তাকে দেখতে চাই না।" এই বক্তব্যের পরেই বড়গাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দেওয়া হয়েছে। এভাবে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা রাজনৈতিক নেতাদের থেকে প্রত্যাশিত নয়। চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দেওয়ার ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান স্থানীয়রা।
বড়গাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান বলেন, "তালা কে দিয়েছে আমরা জানি না। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ আছে তিনি আওয়ামী লীগের দোষর পদধারী নেতা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে চেয়ারম্যান এখানে বৈঠক করেন। নিয়মিত পরিষদে আসেন না। দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবাগ্রহীতাদের। তাই মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে তালা দিয়েছেন।"
এ বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে ঘটনার সময় ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত ছিলেন না প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ইউপি সচিব) রেজাউল ফেরদৌস। তিনি জানান, কে বা কারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দিয়েছে তা অবগত নন। বাইরে থেকে আসার পর তিনি দেখেন পরিষদে অনেক লোকজন ভিড় করছে। পরে দেখেন কক্ষে তালা দেওয়া হয়েছে। তখন তিনি ইউএনও স্যারকে অবগত করলে তিনি ঘটনাস্থলে এসে তালা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করেন।
এবিষয়ে বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমান বলেন, "আমি কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বাইরে তাদের সাথে আমার দেখা হয়। তারা আমাকে আটকে বলে আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। আমি বলি আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তো জানামতে নাই। চলো কার্যালয়ে বসি, শুনি কী কী অভিযোগ। তারা যেহেতু আমার ছাত্র, আমাকে বললো স্যার আপনি চলে যান। আমিও চলে গেলাম, পরে শুনি আমার কার্যালয়ে তারা তালা দিয়ে দিয়েছে।"
এ ব্যাপারে ইউএনও মো. খাইরুল ইসলাম তালা দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। তিনি আরও বলেন, "চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এর আগে কোনো লিখিত অভিযোগ কেউ করেনি। আজকে হঠাৎ তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমরা আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না। যদি চেয়ারম্যান অপরাধী হন, তিনি শাস্তির আওতায় আসবেন। আর যদি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।"
তালা খুলে দেওয়ার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ডা. আহমদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমানের নেতৃত্বে ওই চেয়ারম্যানের অপসারণ ও প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর