
চুয়াডাঙ্গা বাস টার্মিনালটি অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। টার্মিনালটির এখনকার অবস্থা খুবই নাজুক আর জনাজীর্ণ। সংস্কার না হওয়ায় টার্মিনালটি নুয়ে পড়েছে। টার্মিনালের বেশিরভাগ কাউন্টার বন্ধ। যাত্রীদের অনীহা থাকায় এই টার্মিনালে থামে না বাস। কিছু রুটের বাস এলেও তা অল্প সংখ্যক। ফলে শহরের একাধিক জায়গায় যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। রাস্তার পাশে রাখা হচ্ছে বাস। এতে প্রকোট হচ্ছে যানজট। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় ২৮ বছর আগে নির্মিত করে এই বাস টার্মিনালটি।
জানা যায়, যানজটমুক্ত রাখা ও যত্রতত্র গণপরিবহনের অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের পাশে পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর পৌরসভার সাবেক মেয়র অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বাস টার্মিনালের উদ্বোধন করেন। ওই সময় চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা, মেহেরপুর, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোরসহ আন্তঃজেলার বিভিন্ন বাস টার্মিনাল থেকে চলাচল শুরু করে। এর কিছুদিন পর টার্মিনাল থেকে শুধু ঝিনাইদহ এবং হাতেগোনা ঢাকার কিছু বাস চলাচল করলেও অন্য রুটের বাস টার্মিনাল থেকে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে আজ অবধি টার্মিনালটি আর সেভাবে ব্যবহার হয়নি। বর্তমানে মেহেরপুর, আলমডাঙ্গা ও যশোরের বাসগুলো শহরের একাডেমি মোড়, বড়বাজার চৌরাস্তার মোড়, কোর্ট মোড় এবং দৌলতদিয়ার থেকে চলাচল করে থাকে। যাত্রীরা তাদের সুবিধার্থে ওই জায়গাগুলো থেকে বাসে ওঠানামা করছেন।
গতকাল রবিবার বেলা ১২ টার দিকে সরেজমিনে টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, কিছু যানবাহন এবং অল্প কিছু যাত্রী রয়েছে টার্মিনালে। টার্মিনালের ঘরগুলোর দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। আবার কিছু ঘর ভেড়ে পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন কক্ষের দরজাও ভাঙা। যানবাহন না আসার কারণে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার নামে বরাদ্দ করা
কাউন্টারগুলোও বন্ধ রয়েছে। হাতেগোনো মাত্র চার-পাঁচটি কাউন্টার খোলা রয়েছে। তবে টার্মিনালের বিভিন্ন জায়গায় চলছে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন মেরামতের কাজ। টার্মিনালের শৌচাগার ময়লা-আবর্জনায় ভরা। টার্মিনালে যাত্রীদের বসার কোনো জায়গা নেই। কিছু কক্ষে যানবাহন মেরামতের যন্ত্রপাতি রাখা হয়েছে। টার্মিনালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানে গড়ে ওঠা খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলো কোনোরকম ঝিমিয়ে চলছে। টার্মিনালের চারপাশের আঙ্গিনায় লতাপাতার জঙ্গলে আটকে আছে।
কথা হয় টার্মিনাল এলাকার মোহাম্মদ জাফরের সাথে তিনি বলেন, এ টার্মিনাল থেকে ঝিনাইদহ এবং ঢাকা রুটের নির্দিষ্ট কয়েকটি বাস ছাড়া আর কোনো বাস চলাচল করে না। দীর্ঘদিন ধরে এই টার্মিনালটি বন্ধ হয়ে আছে। টার্মিনালের বরাদ্দ ঘর গুলা খুবই নাজুক অবস্থা। টার্মিনালটি সম্পন্ন ভাবে নির্মাণ করা প্রয়োজনের দাবি জানাছি পৌরসভার কাছে। সেই সাথে টার্মিনালটি আবার চালু করলে শহরের সৌর্ন্দয্য ফিরে আসবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাস চালক বলেন, টার্মিনাল এমন এক এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে চালকরা যেতে চান না এমনকি যাত্রীরাও সেখানে যেতে চান না। টার্মিনালে নেমে শহরে যেতে আরও ১৫-২০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। বিশেষ করে যেসব যাত্রী মেহেরপুর, যশোর ও আলমডাঙ্গা রুটে যান তারা অতিরিক্ত ১৫-২০ টাকা খরচ করে টার্মিনালে না এসে পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাসে ওঠেন। এতে যাত্রীদের অনেক সুবিধা হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-মিনিবাস মালিকরা জানান, চুয়াডাঙ্গা শহরটি রেললাইনের পশ্চিম দিকে আর টার্মিনালটি শহরের পূর্বদিকে রেললাইনের ওপারে। ফলে রেলগেটে অনেক সময় গাড়ি আটকে থাকে। এ কারণে টার্মিনালমুখী হতে চায় না অনেক চালক। আবার যাত্রীরা অতোদুরে যেয়ে গাড়িতে উঠতে পারে না। আবার শহর থেকে অনেক দুরে। আবার টার্মিনালের অবস্থা খুবই খারাপ অবস্থা। পরিবেশ ভালো না। টার্মিনালটি যদি সুন্দর ভাবে নির্মাণ করা যায়। শহরের যানজট হবে না। গাড়ি সব এক জায়গায় থামবে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম বলেন, টার্মিনালটি বর্তমানে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এ কারণে টার্মিনাল অনেকেই পছন্দ করেন না। দৃষ্টিনন্দন করে একটি আধুনিক বাস টার্মিনাল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা নির্মাণ করা হলে শহরের ভেতরের রাস্তায় যানজট আর থাকবে না। টার্মিনালটিও আগের রুপ ফিরে পাবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর